আল কুরআনের অতি বিস্ময়কর অলৌকিক গাণিতিক তথ্য -চতুর্থ পর্ব
بسم الله الرحمن الرحيم
সর্বাবস্থায় সকল প্রশংসা আল্লাহর।আমাকে সুখে রাখলেও প্রশংসা আল্লাহর, আমাকে দুঃখে রাখলেও প্রশংসা আল্লাহর । আর অসংখ্য দরূদ নাযিল হোক তাঁর নবীর উপর বারবার। উম্মতের কল্যাণ চিন্তায় যিনি ছিলেন বেকারার।
এখানে দেখুন,
প্রথম পর্ব ■ দ্বিতীয় পর্ব ■ তৃতীয় পর্ব ■ চতুর্থ পর্ব
এই পর্বে আমরা যেই গাণিতিক মিরাকেল নিয়ে আলোচনা করবো সেটা বুঝতে হলে আগে যেই গাণিতিক বিষয়গুলো বুঝতে হবে সেগুলো প্রথমে নীচে আলোচনা করছি।
কোন সংখ্যা ২ ও ৩ দিয়ে ভাগ যায় কি যায়না এই হিসাবে সংখ্যা ৪ প্রকার। যথাঃ
(১)এমন সংখ্যা যা ২ দিয়ে ভাগ যায় কিন্তু ৩ দিয়ে ভাগ যায়না। এমন সংখ্যার নাম আমরা দিলাম টু-নট-থ্রি নাম্বার।
(২)এমন সংখ্যা যা ৩ দিয়ে ভাগ যায় কিন্তু ২ দিয়ে ভাগ যায়না। এমন সংখ্যার নাম আমরা দিলাম থ্রি-নট-টু নাম্বার।
(৩)এমন সংখ্যা যা ২ ও ৩ উভয়টি দিয়েই ভাগ যায়। এমন সংখ্যার নাম আমরা দিলাম টুথ্রি নাম্বার।
(৪)এমন সংখ্যা যা ২ ও ৩ কোনটি দিয়েই ভাগ যায়না। এমন সংখ্যার নাম আমরা দিলাম নট-টু-নট-থ্রি নাম্বার।
আরেকটা ব্যাপার আসুন প্রথম প্রকার সংখ্যাকে উদাহরণ হিসাবে নিয়ে আলোচনা করি, বাকী তিনটাও প্রথমটার মতই। কোন সূরার আয়াত নাম্বার ও সিরিয়াল নাম্বার উভয়টাই যদি টু-নট-থ্রি নাম্বার হয় অথবা আয়াত নাম্বার ও সিরিয়াল নাম্বার কোনটাই টু-নট-থ্রি নাম্বার না হয় তাহলে আমরা বলতে পারি যে, ঐ সূরার আয়াত ও সিরিয়াল নাম্বার এক জাতীয় বা একই গুণবিশিষ্ট বা হোমোজেনাস। তাই ঐ সূরাটিকেও আমরা ১ম গুণের প্রেক্ষিতে বলতে পারি হোমোজেনাস সূরা।
পক্ষান্তরে যদি কোন সূরার আয়াত নাম্বার ও সিরিয়াল নাম্বারের কোন একটি টু-নট-থ্রি নাম্বার হয় আর অন্যটি তা না হয় তাহলে আমরা বলতে পারি যে, ঐ সূরার আয়াত ও সিরিয়াল নাম্বার এক জাতীয় নয় বা একই গুণবিশিষ্ট নয় বা নন-হোমোজেনাস। তাই ঐ সূরাটিকেও আমরা ১ম গুণের প্রেক্ষিতে বলতে পারি নন-হোমোজেনাস সূরা।
তাহলে ১ম প্রকার সংখ্যার প্রেক্ষিতে কোরআনী সূরাগুলোকে আমরা হোমোজেনাস আর নন-হোমোজেনাস এই দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। এরকম বাকী তিন প্রকার সংখ্যার প্রেক্ষিতেও আমরা কোরআনী সূরাগুলোকে হোমোজেনাস আর নন-হোমোজেনাস এই দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। তাহলে উপরোক্ত চার প্রকার সংখ্যার প্রেক্ষিতে আমরা কোরাআনী সূরাগুলোকে মোট আট প্রকারে ভাগ করতে পারি ।
এখন আমরা আল্লাহ চাহেতো সামনে দেখাতে চেষ্টা করবো যে, এই আট প্রকার সূরা কিভাবে কোরআনের ১ম ও ২য় ভাগে অলৌকিকভাবে ঠিক সমভাবে বন্টিত হয়েছে । ব্যস্ততার কারণে এই পর্বে চার্ট দিতে পারিনি। ইনশাল্লহ আস্তে আস্তে চার্ট তৈরী করে অ্যাড করে দিব।
"২ দিয়ে ভাগ যায় কিন্তু ৩ দিয়ে ভাগ যায়না" এমন নাম্বার অর্থাৎ টু-নট-থ্রি নাম্বারের অলৌকিক সমবন্টনঃ
আমরা জানি, প্রতি সূরার সাথে দু'টি নাম্বার আছে। একটা হলো সূরার আয়াত নাম্বার আরেকটা হলো সূরার সিরিয়াল নাম্বার। ২ দিয়ে ভাগ যায় কিন্তু ৩ দিয়ে ভাগ যায়না এমন আয়াত নাম্বার আছে ৪০টি। আর এমন সিরিয়াল নাম্বার আছে ৩৮টি।
এই গুণটি অর্থাৎ ২ দিয়ে ভাগ যায় কিন্তু ৩ দিয়ে ভাগ যায়না এই গুণটি যেসব সূরার আয়াত নাম্বার ও সিরিয়াল নাম্বার উভয়টির মধ্যে পাওয়া যাবে অথবা উভয়টির কোনটির মধ্যে পাওয়া যাবেনা সেসব সূরাগুলো হলো এই গুণের প্রেক্ষিতে হোমোজেনাস সূরা ।
আর এই গুণটি যেসব সূরার আয়াত নাম্বার ও সিরিয়াল নাম্বার উভয়টির কোন একটির মধ্যে পাওয়া যাবে সেসব সূরা হলো এই গুণের প্রেক্ষিতে নন-হোমোজেনাস সূরা।
উল্লেখিত গুণের প্রেক্ষিতে হোমোজেনাস সূরা দু'প্রকার। এক হলো এই গুণটি, আয়াত নাম্বার ও সিরিয়াল নাম্বার উভয়টির মধ্যে পাওয়া যাবে। এমন সূরা ১৫টি। আর দুই হলো এই গুণটি আয়াত নাম্বার ও সিরিয়াল নাম্বার কোনটির মধ্যে পাওয়া যাবেনা। এমন সূরা ৫১টি।
তাহলে মোট হোমোজেনাস সূরা হলো ৬৬টি। বিস্ময়করভাবে এই ৬৬টি সূরার মধ্যে কোরআনের ১ম অর্ধভাগে আছে ৩৩টি সূরা আর ২য় অর্ধভাগে আছে ৩৩টি সূরা। ঠিক সমান দুভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। ঠিক একই ঘটনা সামনে আরো তিন বার ঘটবে।
আবার উল্লেখিত গুণের প্রেক্ষিতে নন-হোমোজেনাস সূরাও দু'প্রকার । এক হলো এই গুণটি আয়াত নাম্বারের মধ্যে পাওয়া যায় কিন্তু সিরিয়াল নাম্বারে পাওয়া যায়না। এমন নন-হোমোজেনাস সূরা হলো ২৫টি। দুই হলো এই গুণটি আয়াত নাম্বারের মধ্যে পাওয়া যায়না কিন্তু সিরিয়াল নাম্বারে পাওয়া যায়। এমন সূরা হলো ২৩টি। তাহলে মোট নন-হোমোজেনাস সূরা হলো ৪৮টি।বিস্ময়করভাবে এই ৪৮টি সূরার মধ্যে কোরআনের ১ম অর্ধভাগে আছে ২৪টি সূরা আর ২য় অর্ধভাগে আছে ২৪টি সূরা। আবারো ঠিক সমান দুভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে।
"৩ দিয়ে ভাগ যায় কিন্তু ২ দিয়ে ভাগ যায়না" এমন নাম্বার অর্থাৎ থ্রি-নট-টু নাম্বারের অলৌকিক সমবন্টনঃ
কোরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে ১৯টি সূরার আয়াত নাম্বার হলো থ্রি-নট-টু নাম্বার। এবং ১৯টি সূরার সিরিয়াল নাম্বার হলো থ্রি-নট-টু নাম্বার। থ্রি-নট-টু নাম্বারের প্রেক্ষিতে মোট হোমোজেনাস সূরা হলো ৮৪টি এবং মোট নন-হোমোজেনাস সূরা হলো ৩০টি। আশ্চর্যজনকভাবে এবারো হোমোজেনাস ৮৪টি সূরা থেকে ঠিক অর্ধেক, ৪২টি সূরা আছে কোরআনের ১ম অর্ধভাগে আর বাকী ৪২টি সূরা আছে ২য় অর্ধভাগে।
এরপর বিস্ময়করভাবে নন-হোমোজেনাস ৩০টি সূরা থেকে ঠিক অর্ধেক, ১৫টি সূরা আছে কোরআনের ১ম অর্ধভাগে আর বাকী ১৫টি সূরা আছে ২য় অর্ধভাগে।
"২ ও ৩ ঊভয়টি দিয়ে ভাগ যায়" এমন সংখ্যা অর্থাৎ টুথ্রি নাম্বারের অলৌকিক সমবন্টনঃ
কোরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে ১৯টি সূরার আয়াত নাম্বার হলো টুথ্রি নাম্বার। এবং ১৯টি সূরার সিরিয়াল নাম্বার হলো টুথ্রি নাম্বার। টুথ্রি নাম্বারের প্রেক্ষিতে মোট হোমোজেনাস সূরা হলো ৮২টি এবং মোট নন-হোমোজেনাস সূরা হলো ৩২টি। আশ্চর্যজনকভাবে এবারো হোমোজেনাস ৮২টি সূরা থেকে ঠিক অর্ধেক, ৪১টি সূরা আছে কোরআনের ১ম অর্ধভাগে আর বাকী ৪১টি সূরা আছে ২য় অর্ধভাগে।
এরপর বিস্ময়করভাবে নন-হোমোজেনাস ৩২টি সূরা থেকে ঠিক অর্ধেক, ১৬টি সূরা আছে কোরআনের ১ম অর্ধভাগে আর বাকী ১৬টি সূরা আছে ২য় অর্ধভাগে।
"২ ও ৩ কোনটি দিয়ে ভাগ যায়না" এমন সংখ্যা অর্থাৎ নট-টু-নট-থ্রি নাম্বারের অলৌকিক সমবন্টনঃ
কোরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে ৩৫টি সূরার আয়াত নাম্বার হলো নট-টু-নট-থ্রি নাম্বার। এবং ৩৮টি সূরার সিরিয়াল নাম্বার হলো নট-টু-নট-থ্রি নাম্বার। নট-টু-নট-থ্রি নাম্বারের প্রেক্ষিতে মোট হোমোজেনাস সূরা হলো ৫৭টি এবং মোট নন-হোমোজেনাস সূরা হলো ৫৭টি।এবার ৫৭ একটি বেজোড় সংখ্যা হওয়ায় যদিও ঠিক সমান দু'ভাগে ভাগ করা সম্ভব নয়। কিন্তু যতটুকু করা সম্ভব ততটুকু করা হয়েছে। হোমোজেনাস ৫৭টি সূরা থেকে ২৯টি সূরা আছে ১ম অর্ধভাগে আর ২৮টি সূরা আছে ২য় অর্ধভাগে।
এরপর নন-হোমোজেনাস ৫৭টি সূরা থেকে ২৮টি সূরা আছে ১ম অর্ধভাগে আর ২৯টি সূরা আছে ২য় অর্ধভাগে।
এই চতুর্থ ক্ষেত্রে অনেকে অনেক কথা বলতে পারে, অনেকে আপত্তি করতে পারে। এটা নিয়ে কেউ পানি ঘোলা করলে আমার তেমন কিছু বলার নেই, শুধু বলবো , অপেক্ষা করুন, এই চতুর্থ ক্ষেত্রে একটু যে এদিক সেদিক হলো, এর পিছনে কি গাণিতিক রহস্য লুকিয়ে আছে, তা ইনশাল্লহ শীঘ্রই বের হবে।
একেক মানুষ একেক মন মেজাজের হয়।অনেকের কাছে এসব সংখ্যার বিন্যাস টিন্যাস অর্থহীন বা আজাইরা বা বেকার মনে হতে পারে। কারো কাছে মনে হতে পারে এগুলো গুরুত্বহীন। কেউ ভাবতে পারে বিন্যাস হয়েছে তো কি হয়েছে? ইত্যাদি ইত্যাদি। তো এই ব্যপারে বলতে চাই যে, আমার আপনার মনে কি জাগলো বা না-জাগলো তাতে কিছুই আসে যায়না। মনে একটা কিছু জাগলেই সেটার অনুসরণ করা যাবেনা, সেটা মেনে নেয়া যাবেনা। আমাকে অতি অবশ্যই চিন্তা করতে হবে যে, আমার চিন্তার ভিত্তি কি? আমি মনে মনে যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি সেটার কী ভিত্তি আছে? আমার সিদ্ধান্তের কি কোন ভিত্তি আছে নাকি নিছক আবেগ বা গোঁড়ামি বা খামখেয়ালীপনা। মনের আজগুবি ভিত্তিহীন চিন্তা ও খেয়ালকে মেনে নেয়ার পরিণতি হবে অতিশয় ভয়ানক। আপনাকে চিন্তা করতে হবে যে আমরা কি দাবী করেছি এবং কিসের ভিত্তিতে দাবী করেছি। আমাদের ভিত্তি বা প্রমাণ ঠিক আছে কিনা সেটা আপনি যাচাই করবেন।ঠিক হলে গ্রহণ করবেন আর ঠিক নাহলে গ্রহণ করবেননা। আর আমাদের দাবী খণ্ডন করতে হলে আপনাকে আমাদের ভিত্তি খণ্ডন করতে হবে, অন্য প্রমাণিত ভিত্তির আলোকে। আমাদের দাবী এমং সেটার ভিত্তি আমরা আগের পোষ্টগুলোতে এবং সেগুলোর কমেন্টে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। অনুগ্রহ করে দেখে নিন। মহান আল্লাহ আমাদের বুঝার তওফিক দিন। এই লেখাকে কবুল করুন। আমিন । সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
তথ্য সূত্র : এখান থেকে নেওয়া
সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ্য থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ
কোন মন্তব্য নেই