সর্বশেষ আপডেট

শুধুমাত্র আল্লাহভীতিই আমাদেরকে গুনাহের কাজ থেকে হেফাজত করতে পারে, পর্ব-১


আমরা প্রতিদিন কত ধরণের গুনাহ করে থাকি। এর সবচেয়ে বড় কারণ হল, আমদের মন থেকে আল্লাহর ভয় উঠে গেছে। আর, যদি আমদের দিলের মধ্যে আল্লাহর ভয় পরিপূর্ণ ভাবে থাকত তবে আমাদের দ্বারা কোন গুনাহ করাই সম্ভব হত না।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাকের এরশাদঃ
যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্মুখে দাঁড়ানোকে ভয় করে, তা জন্য রয়েছে দু’টি জান্নাত   
( সূরায়ে রহমান-৪৬ )
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর ভয়ানক অবস্থাকে ভয় করে এবং চিন্তা করে যে, আমাকে তো একদিন আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে এবং এক একটি আমলের হিসাব দিতে হবে, এমন ব্যক্তির জন্য রয়েছে দু’টি জান্নাত।

উক্ত আয়াতের তফসীর করতে গিয়ে প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত মুজাহিদ ( রহমতুল্লাহি আলাইহি ) বলেন, এই আয়াত দ্বারা ঐ ব্যক্তি উদ্দেশ্য যার অন্তরে কোন মন্দ কাজ করার খেয়াল আসল যে, অমুক মন্দ কাজটি করি। কিন্তু সাথে সাথে তার আল্লাহর কথা স্মরণ পড়ল এবং ভাবলো যে, আমাকে তো একদিন আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। এ ধ্যান ও চিন্তা আসাতে সে এই গুনাহের চিন্তা পরিত্যাগ করল। এমন ব্যক্তির
রয়েছে, দু’টি জান্নাতের প্রতিশ্রতি।

অতঃপর তিনি উক্ত আয়াতের আন্য এক তফসীরে বলেন,
এমন কোন ব্যক্তি যে একাকী কোন নির্জন স্থানে থাকে, যেখানে তাকে দেখার মত কেউ নেই।
যদি সে কোন গুনাহ করতে চায় তবে বাহ্যিক দৃষ্টিতে কোন বাঁধাও নেই। আর এই নির্জনে
থাকাকালীন তার অন্তরে গুনাহের স্বাধও জাগলো, কিন্তু সে ভাবলো, যদিও এখানে আমাকে
কোন মানুষ দেখছে না কিন্তু আমার প্রভু তো আমাকে নিশ্চয়ই দেখছেন। আর একদিন আমাকে সে
প্রভুর সামনে দাঁড়াতেও হবে। এও স্মস্ত খেয়াল আসার ফলে সে গুনাহ থেকে বিরত রইল। তবে
এমন ব্যক্তির জন্যই রয়েছে দুটি জান্নাতের ওয়াদা। আর বাস্তবিক পক্ষে তাকওয়া একেই
বলে যে, মানুষের অন্তরে গুনাহের স্পৃহা হবে কিন্তু সে এ কথা ভেবে গুনাহ থেকে বিরত
থাকবে যে, যদিও আমাকে দুনিয়ার কেউ দেখছে না কিন্তু আসমান থেকে তো একজন নিশ্চয়ই
দেখছেন। আর সমস্ত শরীয়ত এবং তরীকতের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অন্তরে এই ভয় প্রবেশ করানো
যে, একদিন আমাকে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে।

উল্লেখিত আয়াতের তফসীরে বলা হয়েছে, এ আয়াতে
আল্লাহ এ কথা বলেননি, যে জাহান্নামকে ভয় করে বা শাস্তিকে ভয় করে তার জন্য দু’টি
জান্নাত। বরং বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে। এর অর্থ
হচ্ছে যে, তার অন্তরে আল্লাহর বড়ত্ব রয়েছে, এ চিন্তায় নয় যে, তিনি শাস্তি দিবেন।
কিন্তু চিন্তা হল যে, আমি আমার এ আমল নিয়ে আল্লাহর সামনে কিভাবে দাঁড়াব? যার
অন্তরে আল্লাহর বড়ত্ব ও আজমত আছে সে চিন্তা করে যে হায়! আমি আল্লাহর মর্জির খেলাফ
কোন কাজ করে তার সামনে এ চেহারা দেখাবো কেমন করে? আর এভাবে ভয় করার নামই হচ্ছে তাকওয়া।
কোরআনে কারীমে এরশাদ হয়েছে,
যে, ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং স্বীয় নফসকে কুপ্রবৃত্তি থেকে
বিরত রাখে তার ঠিকানা হবে জান্নাত।    ( সূরা নাজিয়াত )
বাস্তবে ভয় করার বস্তু হচ্ছে, আল্লাহর অসন্তুষ্টি। কারণ, জাহান্নাম ও তার শাস্তিকে এজন্যই ভয়
করা হয় যে, তা আল্লাহর অসন্তুষ্টিরই বহিঃপ্রকাশ। তাই আসল ভয়ের বস্তু হচ্ছে, আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও তাঁর বড়ত্ব।

মূলকথা,
মানুষ নিজের সম্মানহানি হওয়াকে পছন্দ করে না। সুতরাং গুনাহ করে কেন নিজের সম্মানকে
বিলীন করবে, সে ব্যাপারে চিন্তা করা উচিত।

আর যারা আল্লাহর পরিচয় যত বেশী জানে। তারা তত বেশী আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যস্ত হয়ে থাকীবং তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকে।

মনে রাখা উচিত যে,
যতক্ষণ পর্যন্ত অন্তরে খোদাভীতির মশাল না জ্বলবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবী থকে পাপ
নির্মুল হবে না। অন্যায়, অত্যাচার, খুন, রাহাজানি বন্ধ হবে না। এগুলো বন্ধ করার
জন্য যদি শত শত পুলিশের পাহারা লাগানো হয় অথবা যদি অনেক অভিজ্ঞ বিচারকও নিযুক্ত
করা হয়, তবুও তা বন্ধ হবে না। কারণ এ পুলিশ ও বিচারক বেশী থকে বেশী হলে দিনের বেলা
অন্যায়ের প্রতিরোধ করতে পারবে। কিন্তু রাতের আঁধারে, গভীর নির্জনে মানুষকে অন্যায় থেকে বিরত রাখতে শধু মাত্র একটি বস্তুই পারে। আর তা হল তাকওয়া বা আল্লাহভীতি। তাকওয়া বা আল্লাহভীতি ছাড়া অন্যায় থেকে বিরত রাখার আর কেউ নেই।

আর যখনই মানুষের অন্তর থকে এ বস্তুটি দূর হয়ে যায়, তখন মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। যার জ্বলন্ত প্রমাণ আজকের সমাজ ব্যবস্থা।

আল্লাহ আমাদের সকলকে
আমল করার তৌফিক দান করুন।

২য় পর্ব এখানে দেখুন

কোন মন্তব্য নেই