সর্বশেষ আপডেট

আল কুরআনের অতি বিস্ময়কর অলৌকিক গাণিতিক তথ্য -তৃতীয় পর্ব



بسم الله الرحمن الرحيم

সর্বাবস্থায় সকল প্রশংসা আল্লাহর। আমাকে সুখে রাখলেও প্রশংসা আল্লাহর, আমাকে দুঃখে রাখলেও প্রশংসা আল্লাহর । আর অসংখ্য দরূদ নাযিল হোক তাঁর নবীর উপর বারবার। উম্মতের কল্যাণ চিন্তায় যিনি ছিলেন বেকারার।

প্রথম পর্ব  ■   দ্বিতীয় পর্ব  ■  তৃতীয় পর্ব  ■  চতুর্থ পর্ব


গণিতবিদরা সংখ্যাকে বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্ন রকমে ভাগ করেছেন। সংখ্যার অনেক ধরণ আছে। কোন সংখ্যার প্রকৃত উৎপাদকগুলোর যোগফল ঐ সংখ্যা থেকে বড় নাকি ছোট নাকি সমান এটা বিবেচনা করে সংখ্যাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
(১)পারফেক্ট নাম্বার
(২)অ্যাবানডন্ট নাম্বার
(৩) ডেফিসন্ট নাম্বার।
সামনে এগুলোর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে এবং কোরআনের মধ্যে এই তিন ধরণের সংখ্যার অলৌকিক বিন্যাস দেখানো হয়েছে।


প্রথমে আমাদের জানতে হবে উৎপাদক কাকে বলে আবার প্রকৃত উৎপাদকই বা কাকে বলে।

ধরুন,একটি সংখ্যা ''ক" । এই "ক"কে যে সংখ্যাগুলো দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা যায় সেই সংখ্যাগুলোকে "ক" এর উৎপাদক বলে। যেমনঃ ৬ এর উৎপাদকসমূহ হলোঃ ১,২,৩,৬। ৮এর উৎপাদকসমূহ হলোঃ ১,২,৪,৮ । ১০ এর উৎপাদকসমূহ হলোঃ ১,২,৫,১০। এই উৎপাদকসমূহের মধ্যে আন্ডারলাইন করা উৎপাদকগুলো হলো প্রকৃত উৎপাদক। অর্থাৎ কোন সংখ্যার উৎপাদকগুলো থেকে খোদ ঐ সংখ্যাটিকে বাদ দিলে যেগুলো বাকী থাকে সেগুলোই সেই সংখ্যার প্রকৃত উৎপাদক।

কোন সংখ্যার প্রকৃত উৎপাদকগুলোর যোগফল যদি ঐ সংখ্যাটির সমান হয়,তাহলে ঐ সংখ্যাটি হলো পারফেক্ট নাম্বার(Perfect number)। যেমনঃ ৬=১+২+৩। সুতরাং ৬ একটি পারফেক্ট নাম্বার।এরপর ২৮, এরপর ৪৯৬, এরপর ৮১২৮ এরপর ৩৩৫৫০৩৩৬ হলো পারফেক্ট নাম্বার। বুঝতেই পারছেন যে, কত দুর্লভ এই নাম্বার।

আর যদি কোন সংখ্যার প্রকৃত উৎপাদকগুলোর যোগফল, ঐ সংখ্যাটির থেকে বড় হয়, তাহলে ঐ সংখ্যাটি হলো অ্যাবানডন্ট নাম্বার। (Abundant number) যেমনঃ ১২ এর প্রকৃত উৎপাদকগুলো হলো ১,২,৩,৪,৬ । এদের যোগফল ১২ থেকে বড়। ১+২+৩+৪+৬= ১৬। সুতরাং ১২ একটি অ্যাবডন্ট নাম্বার।

আর যদি কোন সংখ্যার প্রকৃত উৎপাদকগুলোর যোগফল, ঐ সংখ্যাটির থেকে ছোট হয়, তাহলে ঐ সংখ্যাটি হলো ডেফিসন্ট নাম্বার (Deficient number)। যেমনঃ ৮ এর প্রকৃত উৎপাদকগুলো হলো ১,২,৪। এদের যোগফল ৮ থেকে ছোট । ১+২+৪=৭। সুতরাং ৮ একটি ডেফিসন্ট নাম্বার।

তাহলে আমরা এই তিন ধরণের সংখ্যার পরিচয় পেলাম।এবার আমরা দেখবো এই তিন ধরণের আয়াতবিশিষ্ট সূরাগুলোর মধ্যে জোড় আর বেজোড় সিরিয়াল নাম্বারগুলো কেমন অলৌকিকভাবে ঠিক সমান সমান বিন্যস্ত হয়ে গেছে।

পারফেক্ট আয়াতবিশিষ্ট সূরাগুলোর অলৌকিক বিন্যাসঃ
আমরা আগেই জেনেছি যে, পারফেক্ট নাম্বার অত্যন্ত দুর্লভ। তাই কোরআনে ১১৪টি সূরার মধ্যে মাত্র ৪টি সূরার আয়াত নাম্বার পারফেক্ট নাম্বার।২টি সূরাতে আছে ৬টি করে আয়াত এবং অন্য ২টি সূরাতে আছে ২৮টি করে আয়াত।আশ্চর্যের বিষয় যেটা, সেটা হলো ৪টি সূরার মধ্যে ২টি সূরার সিরিয়াল নাম্বার বেজোড় আর ২টি সূরার সিরিয়াল নাম্বার জোড়।ঠিক সমান ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। কেন? এটা আশ্চর্য কেন? এই জন্যই যে, এই একই ঘটনা সামনে আরো পাঁচবার ঘটবে। ফলে এটা পরিষ্কার বুঝা যাবে যে, এত জটিল ও পারফেক্ট বিন্যাস বারবার কোন অবস্থাতেই ঘটনাচক্রে এমনি এমনি ঘটতে পারেনা। নিশ্চয়ই কেউ এটা পরিকল্পিতভাবে করেছে। এখন প্রশ্ন হলো কে করলো? অবশ্যই বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ পাক করেছেন,যিনি কোরআন নাযিল করেছেন। কেননা ঐ জামানার কারো পক্ষে এমন করা সম্ভব ছিলোনা। যেহেতু তখন কোন ক্যালকুলেটর বা কম্পিউটার ছিলোনা, আরবের লোকেরা শিক্ষাদীক্ষায় ছিলো দুর্বল, বিশেষ করে গণনায় ছিলো আরো বেশী দুর্বল।ইসলামের নবী(সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেও ছিলেন অক্ষরজ্ঞানহীন। কোরআনের আয়াতের শেষে তখন নাম্বারও দেয়া হতোনা, শুধু এমনি একটা চিহ্ন দেয়া হতো। কাগজ কলমের খুব অভাব ছিলো; এমনকি কোরআন লেখার জন্যও কাগজ পাওয়া যেতোনা অধিকাংশ সময়।আর এত বিরাট ও জটিল গাণিতিক কর্মযজ্ঞ যদি তখন হতো, তাহলে কোন না কোনভাবে তা অতি অবশ্যই ইতিহাসের পাতায় উঠে আসতো। কিন্তু না, তামাম ইসলামী ইতিহাসে এই ব্যাপারে কোনই উল্লেখ নেই।নির্ভরযোগ্য বা অনির্ভরযোগ্য কোন ইতিহাসে উল্লেখ নেই। তাহলে কে করলো? সেই একটাই জবাবঃ গণিতের যিনি স্রষ্টা সেই মহাজ্ঞানী আল্লাহই এই অলৌকিক গাণিতিক বিন্যাসে কোরানকে সাজিয়েছেন। এবার উপরে বর্ণিত গাণিতিক বিন্যাসটি নীচে চার্ট আকারে দেখুন।

১ম চার্ট


নন-পারফেক্ট আয়াতবিশিষ্ট সূরাগুলোর অলৌকিক বিন্যাসঃ
কোরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে ১১০টি সূরার আয়াত নাম্বার পারফেক্ট নাম্বার নয়। এখানে আশ্চর্যের বিষয় যেটা, সেটা হলো, ১১০টি সূরার মধ্যে ৫৫টি সূরার সিরিয়াল নাম্বার বেজোড় আর ৫৫টি সূরার সিরিয়াল নাম্বার জোড়। আবারো আগের মত ঠিক সমান দু'ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। সামনে এই ব্যাপারটি চার্টের মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে।

২য় চার্ট


অ্যাবানডন্ট আয়াতবিশিষ্ট সূরাগুলোর অলৌকিক বিন্যাসঃ

আল কোরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে ২৮টি সূরার আয়াত নাম্বার অ্যাবানডন্ট নাম্বার। আশ্চর্যের ব্যপার এই যে, পূর্বের পারফেক্ট ও ননপারফেক্ট আয়াতবিশিষ্ট সূরাগুলোর মত ২৮টি অ্যাবানডন্ট সূরার, সিরিয়াল নাম্বারগুলোও সমান দু'ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। ২৮টি সূরার মধ্যে ১৪টি সূরার সিরিয়াল নাম্বার বেজোড়; অন্যদিকে ১৪টি সূরার সিরিয়াল নাম্বার জোড়।

৩য় চার্ট


নন-অ্যাবানডন্ট আয়াতবিশিষ্ট সূরাগুলোর অলৌকিক বিন্যাসঃ

আল কোরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে ৮৬টি সূরার আয়াত নাম্বার অ্যাবানডন্ট নয়। আশ্চর্যজনকভাবে এক্ষেত্রেও ৮৬টি সূরা সমান দু'ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। ৮৬টি সূরার মধ্যে ৪৩টি সূরার সিরিয়াল নাম্বার বেজোড়; অন্যদিকে ৪৩টি সূরার সিরিয়াল নাম্বার জোড়।

চতুর্থ চার্ট


ডেফিসন্ট আয়াতবিশিষ্ট সূরাগুলোর অলৌকিক বিন্যাসঃ

আল কোরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে ৮২টি সূরা ডেফিসন্ট। আশ্চর্যজনকভাবে আগের দুই ক্ষেত্রের মত এই ক্ষেত্রেও ৮২টি সূরার সিরিয়াল নাম্বারগুলো জোড় আর বেজোড়ের মধ্যে সমান দুভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। ৮২টি ডেফিসন্ট সূরার মধ্যে ৪১টি সূরার সিরিয়াল নাম্বার বেজোড় ; আর অবশিষ্ট ৪১টি সূরার সিরিয়াল নাম্বার জোড়।

৫ম চার্ট


নন-ডেফিসন্ট আয়াতবিশিষ্ট সূরাগুলোর অলৌকিক বিন্যাসঃ

আবার কোরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে ৩২টি সূরা ডেফিসন্ট নয়। অতি আশ্চর্যজনকভাবে এক্ষেত্রেও ৩২টি সূরার সিরিয়াল নাম্বার জোড়-বেজোড় হিসাবে ঠিক সমান দু'ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। ৩২টি সূরার মধ্যে ১৬টি সূরার সিরিয়াল নাম্বার বেজোড় আর ১৬টি সূরার সিরিয়াল নাম্বার জোড়।

ষষ্ট চার্ট


এতক্ষণ ধরে আমরা দেখলাম যে,উল্লেখিত তিন প্রকার আয়াতবিশিষ্ট সূরাগুলোর মধ্যে জোড় আর বেজোর সিরিয়াল নাম্বারগুলো পরপর ছয়বার ঠিক সমানভাবে ভাগ হয়ে গেছে। একেবারে কম বুদ্ধির লোকও এটা বুঝবে যে, এরকম কোনদিনও এমনি এমনি ঘটতে পারেনা।
অবশ্যই এই বিন্যাস গণিতের স্রষ্টা আল্লাহ করেছেন। আল্লাহ আমাদের বুঝার তওফিক দিন ।আমিন। সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।







কোন মন্তব্য নেই