সর্বশেষ আপডেট

যে সমস্ত কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না। (মাসলা-মাসায়েল)


রোযা ইসলামের পঞ্চভিত্তির অন্যতম ভিত্তি। বছর ঘোরে মানব জীবনে প্রতিবারই ফিরে আসে এই রমযান মাস। পূর্ণ একমাস রোযা রাখা সকল বালেগ পুরুষ, মহিলার জন্য ফরজ। আর এই সম্পর্কে কিছু মাসআলা যা জানা থাকা আমাদের প্রত্যেকেরই জরুরি। তাই রোযাদার ভাইদের জ্ঞাতার্থে বলছি, এমন কিছু বিষয় আছে, যার দ্বারা রোযা নষ্ট বা মাকরূহ হয় না। এ সমস্ত বিষয় মুখস্থ রাখা জরুরি। কিছু লোক শুধু স্বীয় জ্ঞান ও বুদ্ধিতে মনে করে, আমার রোযা নষ্ট হয়ে গেছে। পরে ইচ্ছা করে পানাহার করে। কিন্তু মাসআলাগুলো জানা থাকলে আর এমনটি হবেনা।

■ ভুলে খাওয়া ও সহবাস করা-
যদি রোযাদার (ব্যক্তি) ভুল করে কিছু পানাহার করে ফেলে অথবা ভুলে স্ত্রী সহবাস করে, তাহলে তার রোযা নষ্ট হবে না। আর ভুলে পেট ভরে পানাহার করলেও রোযা নষ্ট হবে না। তদ্রƒপ যদি ভুল করে কয়েকবারও পানাহার করে তবুও রোযা নষ্ট হবে না। [বেহেশতি জেওর : ৩/১৪, কুদুরি : ৪৫]

■ রোযার মধ্যে সুরমা, তেল ও সুগন্ধির ব্যবহার-
রোযা রেখে সুরমা বা তেল লাগানো অথবা সুঘ্রাণ লওয়া জায়েয আছে। এমনকি চোখে সুরমা লাগালে যদি থুতু কিংবা শ্লেষ্মায় সুরমার রং দেখা যায়, তবুও রোযা নষ্ট হয় না, মাকরূহও হয় না। [বেহেশতি জেওর : ৩/১০, কুদুরি : ৪৫]

■ নাপাক অবস্থায় রোযা রাখা-
রাত্রে গোসল ফরয হয়, সুবহে সাদিকের পূর্বেই গোসল করে নেওয়া উচিত, যদি কেউ গোসল করতে দেরি করে অথবা সারাদিন গোসল না করে তবে তাতে রোযা নষ্ট হবে না। অবশ্য ফরয গোসল অকারণে দেরিতে করলে এবং সে কারণে নামাজ ত্যাগ করলে তার জন্য পৃথক গুনাহ হবে। [ইলমুল ফেকাহ : ৩/৩১]

■ রোযা অবস্থায় গলায় মশা-মাছি চলে গেলে-
 এমনিতেই যদি গলার ভিতরে মশা-মাছি, ধোঁয়া ধূলাবালি চলে যায়, তবে রোযা নষ্ট হবে না, কিন্তু  ইচ্ছাপূর্বক এরূপ করলে রোযা নষ্ট হবে।[বেহেশতি জেওর : ৩, আলমগিরী : ১/২৯৮,কিতাবুল ফিকহি : ১/৯২২]

■ আল ফিকহি আলাল মাজাহিবিল আরবাআ গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে এ মাসআলা সম্পর্কে বর্ণিত আছে, রাস্তার ধূলাবালি, আটার কণা, মশা-মাছি ইত্যাদি মুখের ভিতর অর্থাৎ পেটে চলে গেলে রোযা নষ্ট হবে না। কেননা এ সমস্ত বস্তু থেকে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন। এমনিভাবে কোনো বস্তু চূর্ণবিচূর্ণ করা বা পেষণের ফলে অথবা কোনো ঔষধজাতীয় বস্তু চূর্ণ করার ফলে সৃষ্ট ধূলাবালির স্বাদ গলার ভিতরে অনুভূত হলে রোযা নষ্ট হবে না। [আলমগিরী : ২/১৭]

■ রোযা অবস্থায় চোখের পানি মুখে চলে যাওয়া-
রোযাদারের চোখের পানি মুখে প্রবেশ করলে আর তা সামান্য হলে যেমন এক দুই ফোঁটা, তাহলে রোযা নষ্ট হবে না। কিন্তু পানির পরিমাণ যদি বেশি অথবা এর লবণাক্ততা মুখের মধ্যে চলে যায়, আর তা যদি গিলে ফেলে, তাহলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। এমনিভাবে চেহারার ঘাম যদি রোযাদারের মুখে প্রবেশ করে তারও হুকুম একই। [আলমগিরী : ২/১৭]

■ নাক থেকে রক্ত বের হলে-
যদি রোযা অবস্থায় নাক থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকে এমনকি তার প্রভাব থুতুর মধ্যে পাওয়া যায়, কিন্তু যদি পেটে রক্ত না পৌঁছে থাকে তাহলে রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। [ফাতওয়ায়ে দারুল উলূম : ৬/৪০৬]

■ নাকের মধ্যে পানি পৌঁছে যাওয়া-
রোযার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় অযু করার সময় ভুলে অথবা জানা সত্ত্বেও পানি নাক দিয়ে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে গেলে অথবা মস্তিষ্ক পর্যন্ত পানি পৌঁছেনি ঠিক কিন্তু এত দূর পর্যন্ত পৌঁছেছে, যার দ্বারা কষ্ট অনুভব হয়। তাহলে শরী'অতের দৃষ্টিকোণ থেকে রোযা নষ্ট হবে না। যদি নাক থেকে পানি গলার মধ্যে চলে আসে, তাহলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। [ইমদাদুল ফাতাওয়া : ১/১৭২,২/১২৯]

■ চোখে ঔষধ দেওয়া-
শরীরের পশমের গোঁড়া দিয়ে যদি তেল প্রবেশ করে, তবে তার দ্বারা রোযা নষ্ট হবে না। এমনিভাবে কোনো ব্যক্তি যদি ঠাণ্ডা পানির দ্বারা গোসল করে আর এ ঠাণ্ডা শরীরে অনুভব হয়, তাহলে এর দ্বারাও রোযা নষ্ট হবে না। এমনিভাবে চোখে ঔষধ দিলেও রোযা নষ্ট হবে না। যদিও তার স্বাদ কণ্ঠনালীর মধ্যে অনুভব হয়। [ফাতাওয়ায়ে আলমগিরী : ২/১৮]

■ কুলি করার পর মুখে পানি থেকে যাওয়া-
কুলি করার পর পানির যে আর্দ্রতা মুখের মধ্যে থেকে যায় তা গিলে ফেলার দ্বারা রোযা নষ্ট হয়  না। তবে শর্ত হল, কুলি করার পর দুই একবার মুখের থুথু ফেলে দিতে হবে। কেননা কুলি করার পর কিছু পানি মুখের মধ্যে থেকে যায়। হ্যাঁ, যদি দুই একবার থুতু ফেলে দেওয়ার পরও পানি অথবা কিছু ভেজা থেকে যায়, তাতে কোনো ক্ষতি নেই।

■ নাকের শ্লেষ্মা গলার দিকে টানা-
নাকের শ্লেষ্মা জোরে টানার কারণে যদি গলার মধ্যে চলে যায় তাতে রোযা নষ্ট হয় না।  এমনিভাবে মুখের লালা টেনে গিলে ফেললেও রোযা নষ্ট হয় না। [বেহেশতি জেওর : ৩/১২, আলমগিরী : ৯/২৭]

■ রোযার মধ্যে থুতু অথবা লালা গিলে ফেলা-
রোযা অবস্থায় মুখের জমাকৃত থুতু ও লালা গিলে ফেলার কারণে রোযার কোনো ক্ষতি হয় না। দাঁতের ফাঁকে যদি কোনো খাদ্যদ্রব্য আটকে থাকে আর ঐ খাদ্যদ্রব্য যদি খেলাল বা জিহবা দিয়ে বের করে গিলে ফেলে, তাহলে রোযা নষ্ট হবে না। কিন্তু ঐ খাদ্যদ্রব্য যদি একটা বুটের পরিমাণ অথবা তদোপেক্ষা বড় হয়, তবে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। [কিতাবুল ফিকহি : ১/৯২০]

■ দাঁতের ফাঁকে থাকা খাদ্যদ্রব্য গলায় যাওয়া-
দাঁতের ফাঁকে গোস্ত, সুপারির টুকরা অথবা অন্য কোনো বস্তু আটকে ছিল খিলাল করে মুখ থেকে বের না করে তা গিলে ফেলল। যদি এর পরিমাণ একটি চানা বুট অথবা তাদোপেক্ষা বড় হয়, তবে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি একটি বুট অপেক্ষা কম হয় তবে রোযা নষ্ট হবে না। কিন্তু যদি মুখ হতে বের করে এনে তারপর গিলে, তবে তা একটি বুট অথবা এর চেয়েও কম হলেও রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। [বেহেশতি জেওর :৩/১১, আলমগিরী : ১/২০৮]

■ রক্ত মিশ্রিত থুতু গিলে ফেলা-
মুখ দিয়ে যদি রক্ত বের হয় এবং থুতুর সঙ্গে তা গিলে ফেলে, তাহলে রোযা নষ্ট হবে। কিন্তু যদি রক্তের পরিমাণটা থুতুর চেয়ে কম হয় এবং রক্তের স্বাদ অনুভব না হয়, তাহলে রোযা নষ্ট হবে না। [বেহেশতি জেওর : ৩/১১]

■ পানের চিপটির লাল রস গিলে ফেলা
 থুতুর মধ্যে যদি বাহির থেকে আগত কোনো রং হয়, তাহলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু যে পান সুবহে সাদিকের পূর্বে খেয়েছে, এর অংশে মুখের মধ্যে ছিল না, কুলি ইত্যাদি করে মুখকে ভালোভাবে পরিষ্কারও করেছে, তদুপরি যদি সকালে থুতুর মধ্যে লালিমা থেকে যায় আর তা গিলে ফেলে, তাহলে তা রোযা ভঙ্গের কারণ হবে না। থুতুর রং লালেরমত হলেও রোযা নষ্ট হবে না। কিন্তু সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।যথাসাধ্য পরিষ্কার করে নিবে। আর যদি কারো সন্দেহ হয়, তাহলে সে রোযার কাযা করে নিবে।[ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম : ৬/৪১৫, দারুল মুখতার : ২/১৪১-১৪২]

■ সাহরীতে মুখে পান নিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া-
যদি শোয়ার সময় পান নিয়ে ঘুমিয়ে থাকে, আর সকাল পর্যন্ত মুখের মধ্যে তা ছিল, তাহলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। যার মুখে পান পাওয়া যায় নি। স্পষ্ট যে, সে গিলে ফেলেছে এবং সে সকাল হওয়ার পরেই গিলেছে। আর যদি পান সম্পূর্ণই পাওয়া যায়, তবুও সম্ভাবনা আছে, তার রস কণ্ঠনালীর ভিতরে গিয়েছে। কারণ, হাকিম ও ডাক্তারগণ এক প্রকার ছুছ গাছের মূল যা ঐ ঔষধের জন্য ব্যবহৃত হয় মুখের মধ্যে নিয়ে শোয়ার জন্য বলেন। যদি রস না পৌঁছত, তাহলে তার দ্বারা কি উপকার ছিল? অর্থাৎ মুখে রস পৌছা যখন প্রমাণ হল, তখন ঘুমানোর অবস্থায় পানাহার করে থাকলে রোযা কাযা করা ওয়াজিব। আর যদি ঘুমানোর পূর্বে পান ফেলে দেয় আর গড়গড়া ইত্যাদি না করে তাহলে যদি মুখের মধ্যে চনাবুটের সমান অথবা চনাবুটের চেয়ে বেশি থাকে, তাহলে রোযা কাযা করা ওয়াজিব। আর যদি এর চেয়েও কম হয় তাহলে রোযা নষ্ট হবে না। [এমদাদুল ফাতওয়া : ১/১৭২]

■ মুখের মধ্যে বালু চলে যাওয়া-
মুখের মধ্যে বালু ঢুকে গেল, এরপর থুতু ফেলল এবং এরপর আবার থুতু গিলে ফেলল। এরপর দাঁতের মধ্যে বালু অনুভব করল যে, বালু ভিতরেই রয়ে গেছে। এ অবস্থায় রোযা নষ্ট হবে না। [এমদাদুল ফাতওয়া : ১/১৭২]

■ কৃত্তিম দাঁতের বিধান-
যে ব্যক্তি মুখের মধ্যে সব সময় কৃত্তিম দাঁত লাগিয়ে রাখে। তার এ দাঁতের মধ্যে গন্ধ ও স্বাদ কিছুই নেই। রোযা অবস্থায় এই দাঁত মুখের মধ্যে থাকলে রোযা মাকরূহ হবে না। [এমদাদুল ফাতাওয়া জাদিদ ৩ বতিব : ২/১৪২]

■ পায়রিয়ার পিপ মুখে চলে যাওয়া
পায়রিয়ার কারণে দাঁতের মাড়ির মধ্যে পুঁজ আসে, তা থুতুর সাথে গিলে ফেললে রোযা নষ্ট হবে না। কারণ পায়রিয়া একটি স্বতন্ত্র রোগ, যার পুঁজ মুখের মধ্যেই সৃষ্টি হয় এবং এর থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। পুঁজের পরিমাণও কম। যদি থুতুর চেয়ে বেশি হয় তবুও এ কারণে রোযা নষ্ট হবে না। [ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়াহ : ৩/১০৯, আলমগীরী :২/১৩১]

■ ঢেকুরের পর মুখের মধ্যে পানি আসা-
যে ব্যক্তি সাহরীর সময় এ পরিমাণ খানা খেয়েছে যে, সূর্য উদিত হওয়ার পর ঢেকুর আসতে শুরু করেছে আর তার সাথে পানিও আসে এ দ্বারা রোযার মধ্যে কোনো ক্ষতি হবে না।[ফাতাওয়ায়ে রশীদিয়াহ : ৩৭১]

■ মিসওয়াক ও কয়লার দ্বারা দাঁত পরিষ্কার করা-
রোযা রেখে দিনের বেলায় কয়লা চিবিয়ে বা মাজন দ্বারা দাঁত মাজা মাকরূহ এবং এর কিছু অংশ যদি কণ্ঠনালির নিচে চলে যায়, তবে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। কাঁচা বা শুকনা মিসওয়াক দিয়ে দাঁত মাজা জায়েয এমনকি যদি নিমের কাঁচা ডালের দ্বারা মিসওয়াক করা হয় এবং তার তিক্ততার স্বাদ মুখে অনুভূত হয় তবুও মাকরূহ হবে না।[বেহেশতি জেওর : ৩/১৩, মারাকিউল ফালাহ : ২১০]

■ মিসওয়াকের কণা পেটের মধ্যে চলে যাওয়া-মিসওয়াক করার সময় তার কণা যদি পেটের মধ্যে চলে যায় আর চেষ্টা করার ফলেও বের করা সম্ভব না হয়, তাহলে এর দ্বারা রোযা নষ্ট হবে না। কারণ, এর থেকে বেঁচে থাকা কঠিন। [আহসানুল ফাতাওয়া পাকিস্তানী : ৪/৪৩৫]

■ টুথপেষ্ট ও টুথ পাউডারের ব্যবহার-
রোযা অবস্থায় ফুকাহায়ে আহনাফ মেসওয়াক করার
অনুমতি দিয়েছেন। যদিও মেসওয়াকটা শুকনা ডালের তৈরি তথাপি এর মধ্যে এক ধরণের স্বাদ বিদ্যমান আছে। কিন্তু টুথপেস্ট ও টুথ পাউডারের অবস্থা এ থেকে ভিন্ন। এর মধ্যে অনেক স্বাদ অনুভব হয়। তাই টুথপেস্ট ও টুথ পাউডারকে মেসওয়াকের সাথে তুলনা করা যাবে না। মেসওয়াকের সুন্নত আদায় করার জন্য এগুলোর প্রয়োজনও হয় না। এজন্য কোনো বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত এগুলো ব্যবহার করা মাকরূহ। অবশ্য ওযরবশত করা যেতে পারে। [জাদীদ ফেকহি মাসায়েল : ১/১০২]

■ রোযার মধ্যে বমি করা-
রোযার মধ্যে যদি মুখ ভরে বমি হয় এবং একটি চনাবুটের সমপরিমাণ অথবা তার চেয়ে বেশি জেনে শুনে ইচ্ছাপূর্বক আবার তা মুখের মধ্যে ফিরিয়ে নেয়, তাহলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে রোযা কাযা করা ফরয; কাফ্ফারা লাগবে না। আর যদি ইচ্ছাকৃতভাবে যেমন মুখে আঙ্গুল বা অন্য কিছু প্রবেশ করিয়ে মুখ ভরে বমি করে তাহলে সর্বাবস্থায় রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। যদি তা আবার মুখে ফিরিয়ে আনা হয়। সুতরাং যদি মুখ ভরে বমি না হয় তাহলে রোযা নষ্ট হবে না। [আহছানুল ফাতাওয়া: ৬/৪৩৩, রাদ্দুল মুহতার : ২/১২০]

■ ইচ্ছা করে বমি করার সময় কিছু মুখে চলে যাওয়া-
কেউ যদি ইচ্ছা করে বমি করে আর তা মুখ ভরে না হয় তাহলে রোযা নষ্ট হবে না। যে বমি ইচ্ছাকৃত হয় এবং মুখ ভরে না হয় আর ঐ বমি অনিচ্ছায় কণ্ঠনালির নিচে চলে গেলে রোযা নষ্ট হবে না। [ইলমুল ফিকহ : ৩/৩২]

■ আপনা আপনি বমি হয়ে যাওয়া-
সামান্য অথবা বেশি যে পরিমাণই হোক না কেন, অনিচ্ছায় বমি হলে রোযা নষ্ট হবে না। সুতরাং যদি ইচ্ছাকৃত বমি করে এবং তা মুখ ভরে হয়ে থাকে তাহলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি এর থেকে কম হয় তাহলে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করার দ্বারাও রোযা নষ্ট হবে না। এমনিভাবে সামান্য বমি আসল। এরপর নিজে নিজেই কণ্ঠনালিতে ফিরে গেল তবুও রোযা নষ্ট হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত ফিরিয়ে নিলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। [বেহেশতি জেওর : ৩/১২, আলমগীরি : ১/২০২]

■ বমি হওয়ার পর ইচ্ছা করে খানা খাওয়া-
যদি কারও বমি হয় এবং সে মনে করে যে আমার রোযা নষ্ট হয়ে গেছে, এই ধারণায় ইচ্ছা করে পানাহার করে রোযা ভেঙ্গে ফেলে, তবুও কাযা ওয়াজিব ; কাফফারা ওয়াজিব নয়। [বেহেশতি জেওর : ৩/১৩, আলগিরী : ১/২০৪]

■ মাথায় তেল মালিস করা এবং গুপ্তাঙ্গের ভিতরে তেল প্রবেশ করানো-
যদি কোনো ব্যক্তি রোযা অবস্থায় মাথায় তেল দেয়, চোখে সুরমা লাগায় অথবা গুপ্তাঙ্গের ছিদ্রের মধ্যে কোনো শুকনা বস্তু প্রবেশ করায় আর তার পার্শ্ব বাইরে থাকে অথবা ভিজা বস্তু প্রবেশ করায় এবং সেটা যদি ডুস এর স্থান পর্যন্ত না পৌঁছে, তাহলে যেহেতু এই বস্তু পেট পর্যন্ত পৌঁছেনি সেহেতু রোযা নষ্ট হবে না। কাফফারা কিংবা কাযা কোনোটাই ওয়াজিব হবে না। আর যদি শুকনা বস্তু যেমন তুলা, কাপড় ইত্যাদি পুরুষের মলদ্বারে প্রবেশ করায় আর সমস্তটাই ভিতরে পৌঁছে যায় তাহলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে এবং শুধু কাযা ওয়াজিব হবে। এমনিভাবে যদি কোনো পুরুষ স্বীয় লিঙ্গের ছিদ্রের মধ্যে কোনো বস্তু যেমন তেল, পানি ঢালে চাই পিচকারীর দ্বারা অথবা এমনিই অথবা সুরমার শলাকা ইত্যাদির দ্বারা প্রবেশ করায়, তাহলে যদিও এই সমস্ত বস্তু পাকস্থলি পর্যন্ত পৌঁছে যায় তদুপরী রোযা নষ্ট হবে না। [বেহেশতি জেওর : ১১/১০৬]

■ রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা ও কোলে নেওয়া-
রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা ও কোলে নেওয়া এ সমস্ত কাজ জায়েয। কিন্তু যুবক মানুষ রোযা অবস্থায় এমন কাজ করবে না। যা সহবাসের প্রতি আকৃষ্ট করে। [ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম : ৬/৪১২, হিদায়া : ১/১৯৯]

■ স্বামী-স্ত্রীর লজ্জাস্থান একত্র হওয়া-
রোযার দিনে স্ত্রীকে আদর করে অথবা আলিঙ্গন করে অথবা একে অপরের সাথে লজ্জাস্থান মিলালে যার দ্বারা কামভাব সৃষ্টি হয়। এরপর উভয়ে পৃথক হয়ে যায়। এরূপ করলে রোযা হয়ে যাবে, কিন্তু যুবক ব্যক্তির এইরূপ করা ভালো নয়। [ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম : ৬/৪০৭]

■ রোযার মধ্যে মযি বের হওয়া-
রোযার মধ্যে স্ত্রীকে আদর ইত্যাদি করার  কারণে উত্তেজনার দ্বারা যদি মযি (আদর ইত্যাদীর দ্বারা যে পানি আসে তাকে মযি বলে।) আসে, তাহলে এর দ্বারা রোযার কোন ক্ষতি হয় না। কিন্তু মনি বের হওয়ার দ্বারা রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। যদি রোযার ক্ষতি হয়, তাহলে চুম্বন ও কোলে নেওয়া মাকরূহে তাহরীমী। [আহসানুল ফাতাওয়া :৪/১৪১, রাদ্দুল মুহতার : ২/১২৩]

 রোযার মধ্যে দেখার দ্বারা বীর্যপাত হওয়া-
শুধু দেখা ও খেয়াল করার দ্বারা যদি বীর্যপাত হয়ে যায় আর তা অনিচ্ছায় হয়, তাহলে রোযা নষ্ট হবে না। যেমন, স্বপ্নদোষ হওয়ার দ্বারা রোযা নষ্ট হয় না। অর্থাৎ শুধু কামোত্তেজক বস্তু দেখার অথবা চিন্তা করার দ্বারা যদি কারো বীর্যপাত হয়ে যায়, তাহলে এর দ্বারা রোযা নষ্ট হবে না। [কিতাবুল ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা'আহ : ১/৯২০]

■ সুবহে সাদিকের সাথে সাথে স্ত্রী থেকে পৃথক হওয়া-
কারো রোযার কথা স্মরণ ছিল না অথবা তখনো রাতের কিছু সময় অবশিষ্ট ছিল। তাই স্ত্রী সহবাস আরম্ভ করে ছিল অথবা কোনো কিছু সময় অবশিষ্ট ছিল। এরপর যখনই তার রোযার কথা মনে পড়ে গেল অথবা যখনই সুবহে সাদিক হয়ে গেল সাথে সাথেই স্ত্রী হতে পৃথক হয়ে গেল অথবা খাদ্যের লোকমাটিা মুখ থেকে রেখে দিল। এমতাবস্থায় যদি স্ত্রী হতে পৃথক হয়ে যাওয়ার পরও বীর্যপাত হয় তবুও রোযা নষ্ট হবে না। এ বীর্যপাতকে স্বপ্নদোষের সাথে তুলনা করা যাবে। [বেহেশতি জেওর : ১১/১০৬, রাদ্দুল মুহতার: ১/১৩৮]

■ রোযার মধ্যে রুমাল ভিজিয়ে মাথায় রাখা-
রোযার মধ্যে ইচ্ছাপূর্বক রুমাল ভিজিয়ে মাথায় দেয়া, যেন রোযা রাখা সহজ হয়। এই কাজটি আবূ দাউদ এবং রাদ্দুল মুহতার এর বিবরণ থেকে বুঝা যায়, বিশুদ্ধ মতে এরূপ করা মাকরূহ নয়। [ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম : ৬/৪০৬, রাদ্দুল মুহতার : ২/১৫৬]

■ রোযা অবস্থায় ভেজা কাপড় পরিধান করা বা গোসল করা-
রোযার মধ্যে ভেজা কাপড় পরিধান করা আর তিন চার বার গোসল করা জায়েয আছে। এতে রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। [ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম :৬/৪০৭, আলমগিরী : ১/১৮৬]

> গরমের কারণে রোযার মধ্যে কুলি করা-
রোযার মধ্যে গরমের কারণে কুলি করা নাকে পানি দেওয়া, মুখে পানি দেওয়া গোসল করা এবং কাপড় ভিজিয়ে শরীরের ওপর রাখার দ্বারা রোযা নষ্ট হয় না। [ইলমুল ফিকহি : ৩/৩৩]

> রোযার মধ্যে রক্ত বের করানো-
রোযা অবস্থায় ইনজেকশনের দ্বারা রক্ত বের করলে রোযা নষ্ট হবে না। তবে যদি এমন দুর্বলতার আশঙ্কা হয় যে, রোযা রাখার শক্তি থাকবে না, তাহলে মাকরূহ। [আহছানুল ফাতাওয়া : ৪/৪২৫]

কোন মন্তব্য নেই