কোরবানি ও কোরবানির পশু সম্পর্কে কিছু জরুরি মাসলা মাসায়েল
কোরবানি হলো মুসলিম সমাজের ত্যাগের উৎসব। এ দিনে গোটা বিশ্বের মুসলমান হযরত ইবরাহীমের আদর্শে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গরু, ছাগল, উট, দুম্বা ও মহিষ কোরবানি দিয়ে থাকে।
একজন মুমিন তার জীবনের সব কিছু আল্লাহর রাহে কোরবানি করার ওয়াদা করেন পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে। সে কারণে ঈদুল আযহার বৈশিষ্ট্য ঈদুল ফিতর থেকে কিছুটা ভিন্নতর।
যেসব পশু দিয়ে কোরবানি দেয়া যাবে : গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, দুম্বা, উট ইত্যাদি পশু কোরবানি দেয়া যাবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে এই যে, গরু, মহিষ কমপক্ষে দুই বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা কমপক্ষে এক বছরের হতে হবে। উট কমপক্ষে পাঁচ বছরের হতে হবে। অবশ্য ছয় মাসের ভেড়া যদি দেখতে মোটাতাজা হয় এবং এক বছর বয়সের মনে হয় তাহলে তা দিয়ে কোরবানি বৈধ।
যে পশুই কোরবানি দেয়া হোক না কেন তা হতে হবে সুস্থ ও সবল। কোরবানির পশু চয়নের ক্ষেত্রে মনে রাখবে, এই পশুটি আল্লাহর দরবারে উপহার দেয়া হচ্ছে। তাই উৎকৃষ্ট পশু উপহার দেয়া উচিত। দুনিয়াতে আমরা কোনো উচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তির নিকট যদি কোন উপহার পাঠাই, তাহলে সবচে’ ভাল এবং উৎকৃষ্ট জিনিসটি পাঠাই। তাহলে মহান আল্লাহর নিকট পাঠানো জিনিস কেন উৎকৃষ্ট হবে না?
পশুর মধ্যে যেসব ত্রুটি থাকলে কোরবানি দেয়া যাবে না : (১) যে পশুর দৃষ্টিশক্তি নেই। (২) যে পশুর শ্রবণশক্তি নেই। (৩) এই পরিমাণ লেংড়া যে, জবাই করার স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না। (৪) লেজের অধিকাংশ কাটা। (৫) কানের অধিকাংশ কাটা। (৬) অত্যন্ত দুর্বল, জীর্ণ-শীর্ণ প্রাণী। (৭) গোড়াসহ শিং উপড়ে গেছে। (৮) পশু এমন পাগল যে, ঘাস পানি ঠিকমত খায় না। মাঠেও ঠিকমত চরানো যায় না। (৯) জন্মগতভাবে কান নেই। (১০) দাঁত মোটেই নেই বা অধিকাংশ নেই। (১১) স্তনের প্রথমাংশ কাটা। (১২) রোগের কারণে স্তনের দুধ শুকিয়ে গেছে। (১৩) ছাগলের দুটি দুধের যে কোন একটি কাটা। (১৪) গরু বা মহিষের চারটি দুধের যেকোন দুটি কাটা। (১৫) জন্মগতভাবে একটি কান নেই।
পশুর মধ্যে যেসব ত্রুটি থাকলে কোরবানি দেয়া যাবে : (তবে উত্তম হচ্ছে পরিপূর্ণ সুস্থ পশু দেয়া, ত্রুটিযুক্ত প্রাণী না দেয়া) (১) পশু পাগল, তবে ঘাস-পানি ঠিকমত খায়। (২) লেজ বা কানের কিছু অংশ কাটা, তবে অধিকাংশ আছে। (৩) জন্মগতভাবে শিং নেই। (৪) শিং আছে, তবে ভাংগা। (৫) কান আছে, তবে ছোট। (৬) পশুর একটি পা ভাংগা, তবে তিন পা দিয়ে সে চলতে পারে। (৭) পশুর গায়ে চর্মরোগ। (৮) কিছু দাঁত নেই, তবে অধিকাংশ আছে। স্বভাবগত এক অন্ডকোষ বিশিষ্ট পশু। (১০) পশু বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে বাচ্চা জন্মদানে অক্ষম। (১১) পুরুষাঙ্গ কেটে যাওয়ার কারণে সঙ্গমে অক্ষম।
কতজন মিলে একটি পশু কোরবানি দিতেপারবে : ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি পশু শুধু এক ব্যক্তি কোরবানি দিতে পারবে। গরু, মহিষ, উট সর্বোচ্চ সাত ব্যক্তি মিলে কোরবানি দিতে পারবে। অনেকে মনে করে থাকে, কোরবানির পশুতে একাধিক শরীক থাকলে অংশ নির্ধারণ করতে হবে বেজোড় সংখ্যা হিসেবে।
শরীক হতে হবে তিনজন, পাঁচজন বা সাতজন- এই ধারণা ঠিক নয়। সঠিক বিষয় হচ্ছে এই যে, এক থেকে সাত পর্যন্ত যে কোন অংশে পশুটিকে ভাগ করা যাবে। তাই দু’জন, তিনজন, চারজন, পাঁচজন, ছয়জন ও সাত ব্যক্তি মিলে একটি পশু কোরবানি দিতে পারবে।
একাধিক শরীক থাকলে করণীয় : একাধিক শরীক থাকলে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, অংশহিসেবে ভাগ যেন যথার্থ হয়। প্রাপ্য অংশের চেয়ে কেউ যেন কম বা বেশি না পায়। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, কারো যেন নিয়তে গড়মিল না থাকে। কোন অংশীদারের যদি শুধু মাংস খাওয়া উদ্দেশ্য হয় তাহলে কারো কোরবানি হবে না। এজন্য কুরবানি শুদ্ধ হওয়ার জন্য সবার নিয়ত শুদ্ধ হওয়া জরুরি।
ভাল পশু ক্রয়ের পর ত্রুটিযুক্ত হয়ে গেলে :কোরবানির উদ্দেশ্যে ভাল পশু ক্রয়ের পর যদি তা এই পরিমাণ ত্রুটিযুক্ত হয়ে যায়, যা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না তাহলে দেখতে হবে ক্রেতা ধনী না দরিদ্র? ক্রেতা যদি দরিদ্র হয় তাহলে সেই ত্রুটিযুক্ত পশু দিয়েই সে কোরবানি দিবে। আর যদি ক্রেতা ধনী হয়, তাহলে দ্বিতীয় আরেকটি পশু কিনে কোরবানি দিতে হবে। প্রথমটি দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হবে না। (ফতোয়ায়ে শামী, ৫ম খন্ড, ২৮৪ পৃষ্ঠা)
পশু জবাই করার জন্য যেসব শর্তঃ ইসলামী শরীয়তে পশু জবাই করার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। (১) জবাইকারী ব্যক্তি মুসলমান হতে হবে। (২) জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে হবে। (৩) পশুর খাদ্যনালী, শ্বাসনালী ও গলায় অবস্থিত অন্যান্য রগ ভালভাবে কাটতে হবে। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, ২য় খন্ড, ৩৭৫ পৃষ্ঠা।)
জবাই সংক্রান্ত হাদীস : (১) হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস (রাঃ) বলেন, প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহপাক সব কাজের মধ্যে উত্তম পদ্ধতি অবলম্বন করাকে অপধারিত করে দিয়েছেন। তাই বিচারবিভাগ কোন অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড দিলে তা কার্যকর করবে। আর যখন কোন পশু জবাই করবে তখন উত্তম পদ্ধতিতে জবাই করবে। (উত্তম পদ্ধতি হলো) ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে দ্রুত জবাইয়ের কাজ সম্পন্ন করবে, যাতে মৃত্যুযন্ত্রণা থেকে সে রক্ষা পায়। (বুখারী শরীফ)। (২) এক সাহাবী পশু শোয়ানোর পর ছুরি ধার দিচ্ছেলেন। হুজুর (সা.) দেখলেন এবং বললেন, তুমি প্রাণীটিকে একাধিকবার মৃত্যু দিতে চাচ্ছো।
জবাই করার নিয়মাবলী : (১) জবাই করার পূর্বে পশুকে ঘাস, পানি ইত্যাদি ভালভাবে খাওয়াতে হবে। কোরবানির প্রাণীকে ক্ষুধার্থ বা পিপাসার্ত রাখা অন্যায়। (২) পশুকে কোরবানি করার স্থানে টেনে হিঁচেড়ে নেয়া অন্যায়। (৩) জবাই করার জন্য পশুকে শোয়াতে হবে সহজ সুন্দরভাবে। কঠোরভাবে নয়। (৪) কেবলার দিকে ফিরিয়ে শোয়াতে হবে, বাম পার্শ্বের উপর। (৫) পশুর চার পায়ের মধ্যে তিনটি বাঁধবে। (৬) আগে থেকেই ছুরি ধারা দিয়ে রাখবে। ভোঁতা ছুরি দিয়ে জবাই করবে না। (৭) ছুরি যদি ধরাতে হয় তাহলে পশুর সামনে ধারাবে না। আড়ালে ধারাবে। (৮) কোরবানির পশু শোয়ানোর পর ছুরি ধারানো অন্যায়। বরং আগে থেকেই ধার দিয়ে নিবে (ফতোয়ায়ে রহীমিয়া, ১ম খন্ড, ৯৮ পৃষ্ঠা) (৯) গলায় জবাই করতে হবে। (১০) এমনভাবে জবাই করা যাবে না যাতে গলা পুরাপুরি আলাদা হযে যায়। (১১) জবাই করার সময় ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলতে হবে। (১২) যাতে দ্রুত জবাই হয়ে যায় এবং পশুর কষ্ট কম হয় সেদিকে খেয়াল রাখবে। (১৩) একটি পশুকে আরেকটি পশুর সামনে জবাই না করা ভাল। (১৪) পশুর প্রাণ বের হওয়ার পূর্বে চামড়া খসানোর কাজ শুরু না করা। (১৬) ঘাড়ের দিক থেকে জবাই করা যাবে না। (১৭) বিখ্যাত সাহাবী হযরত ইবনে আববাস রা. এর মত অনুযায়ী ঘাড়ের দিকে থেকে জবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়া বৈধ নয়। (জাওয়াহিরুল ফিক্হ, ২য় খন্ড, ২৭৩ পৃষ্ঠা)
জবাইয়ের সময় বিভিন্ন দোয়া : (১) কোরবানির পশু কেবলার দিকে ফিরিয়ে শোয়ানোর পর এই আয়াত পড়বে : ‘ইন্নি ওয়াজ জাহতু ওয়াজ হিয়া লিল্লাযি ফাতারাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহ ইয়ায়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাবিবল আলামিন। লা শারীকা লাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন’।
অর্থ নিশ্চয় আমি দৃঢ়ভাবে সেই মহান সত্তার অভিমুখী হলাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের অন্তর্গত নই। নিশ্চয় আমার নামায, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ সবই বিশ্ব প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্যে নিবেদিত। তার কোন শরীক নেই। আমি একাজের জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং (আল্লাহর কাছে) আত্মসমর্পণকারীদের একজন। (২) জবাই করার সময় এই দোয়া পড়বে : ‘আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা’ অর্থ : হে আল্লাহ! (এই কোরবানির পশু) তোমার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত এবং তোমারই জন্য উৎসর্গকৃত। এরপর ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ পড়বে। (অর্থ : মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি। আল্লাহ সবচেয়ে বড়।) (৩) জবাই করার পর এই দোয়া পড়বে : ‘আল্লাহুম্মা তাকাববালহু মিন্নি কামা তাকাববালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিন ওয়া খলিলিকা ইব্রাহিমা আলাইহিমাস সালাম’।
অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! এই কোরবানিটি আমার পক্ষ থেকে কবুল করুন, আপনি যেরূপভাবে তা কবুল করেছিলেন আপনার প্রিয় বন্ধুদ্বয় মুহাম্মদ (সা.) ও ইব্রাহিম (আ.)-এর পক্ষ থেকে’ (মেশকাত শরীফ, ১ম খন্ড, ১২৮ পৃষ্ঠা)। প্রিয় পাঠ! পশু সংক্রান্ত যেসব বিষয় আমরা জানলাম, আল্লাহপাক যেন আমাদের সবাইকে এর ওপর আমল করার তৌফিক দান করেন। আমিন।
কোরবানির পশুর গোস্ত বণ্টন ও চামড়াসম্পর্কিত মাসায়েল : প্রতি বছর আমরা পশু কোরবানি করে থাকি। গোস্ত নিজেরা খাই এবং অন্যকে দেই। চামড়া বিক্রি করে গরীবদের মাঝে সে অর্থ বিলিয়ে দেই। এ বিষয়ে ইসলামের দিকনির্দেশনা পুরোপুরিভাবে আমরা অনেকেই জানি না। তাই প্রথমেই গোস্ত বণ্টন সম্পর্কে শরীয়তের বিধান জেনে নেই। এরপর চামড়া সংক্রান্ত বিষয়ে ইসলামের বিধান জেনে নেব।
(১) কোরবানির পশুর গোস্ত তিন ভাগ করে এক ভাগ গরীব মানুষকে, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীকে দিবে। বাকি এক ভাগ নিজে খাবে। (২) আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী গোস্ত নিতে আসবে এই অপেক্ষা না করে নিজ দায়িত্বে তাদের ঘরে গোস্ত পৌঁছে দেয়া উচিত। (৩) যদি একাধিক শরীক থাকে তাহলে গোস্ত ভাগ করবে ওজন করে। অনুমান বা আন্দাজ করে নয়। কারণ অনুমান করে ভাগ করলে বেশকম হতে পারে, যা গুণাহের কারণ। (৪) যে কসাই গোস্ত তৈরি করে দিবে তাকে আলাদাভাবে কাজের জন্য মজুরি দিতে হবে। মজুরি হিসেবে কোরবানির গোস্ত দেয়া জায়েজ নেই। তার প্রাপ্য মজুরি দেয়ার পর লিল্লাহ গোস্ত আলাদা দেবে। (৫) কারো ভাগে যদি পায়া, ক্ষুর, মাথা বা কোন হাড্ডি বেশি যায় তাহলে তার অংশ থেকে গোস্ত একটু কমিয়ে দিতে হবে। যেন গড়ে সমান হয়। (৬) কোরবানি যেহেতু আল্লাহর জন্য করা হয়, তাই এতে নিজে ভোগ করার চেয়ে গরীব মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা বেশি করা উচিত। (৭) কোরবানির গোস্ত নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে, যতদিন ইচ্ছা রেখে খাওয়া যায়, এতে কোন বাধা নেই। (৮) পশুর রশি ও গলার মালা ইত্যাদি দান করে দিতে হবে।
চামড়া সংক্রান্ত আলোচনা : (১) কোরবানির পশুর চামড়া নিজে ব্যবহার করতে পারবে। (২) গোস্তের মতো অন্যকে উপহারও দিতে পারবে। (৩) উত্তম হচ্ছে পশুর চামড়া কোন মাদরাসার পরিচালককে উপহার দিয়ে দেয়া। তাহলে তিনি এটা বিক্রি করে মাদরাসার যে কোন কাজে লাগাতে পারবেন। উল্লেখ্য, বর্তমান পৃথিবীতে ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু হলো মাদরাসা। তাই মাদরাসায় আর্থিক সহায়তা করা সব মুসলমানের দায়িত্ব। কোরবানির পশুর চামড়া দানের মাধ্যমে আমরা সেই দায়িত্ব পালন করতে পারি। (৪) চামড়া যদি বিক্রি করা হয় তাহলে তার মূল্য অবশ্যই গরীব মানুষের মধ্যে দান করে দিতে হবে। নিজে ব্যবহার করা যাবে না। (৫) চেষ্টা করা উচিত চামড়ার টাকা পরিবর্তন না করে হুবহু দান করে দিতে। (৬) চামড়া সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির চেয়ে কোনো মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করা উত্তম। কারণ তারা এ থেকে উপার্জিত সম্পূর্ণ অর্থ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যয় করবে।
কোরবানির সাথে আকিকা দেয়া যায় কিনা :কোরবানির সাথে আকিকা দেয়া যায়। এতে কোন সমস্যা নেই। কোরবানির গোস্তের মতো আকিকার গোস্তও নিজে খেতে পারবে, অপরকে খাওয়াতে পারবে, দিতেও পারবে। ছেলের আকিকা হলে দুইটি ছাগল অথবা গরুতে দুই শরীক এবং মেয়ের আকিকা হলে একটি ছাগল অথবা গরুতে এক শরীক দিতে হবে। যেমন একটি হাদীসে এসেছে, বিখ্যাত সাহাবী হযরত আমর ইবনে শোয়াইব (রা.) বলেন, প্রিয় নবী (সা.) বলেন, যার সন্তান হয় সে যদি চায় আকিকা দিতে, তাহলে ছেলে সন্তান হলে দুটি ছাগল এবং মেয়ে সন্তান হলে একটি ছাগল আকিকা দিবে। আবু দাউদ, নাসায়ী।
প্রিয় পাঠক! এখানে একটি ভুল ধারণার অবসান হওয়া উচিত। কেউ মনে করতে পারে, এখানে মেয়ে সন্তান হলে মাত্র একটি ছাগল দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আর ছেলে হলে দুটি। এতে করে ছেলেদের মর্যাদা বেশি দেয়া হয়েছে। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কোনভাবেই ছেলের মর্যাদা বেশি দেয়া হয়নি। কারণ, আকিকা দেয়া হয় সন্তানের উপর থেকে বিপদ আপদ যেন দূর হয়ে যায় এই উদ্দেশ্যে। সাধারণত ছেলে সন্তানের উপর বিপদ আপদ বেশি আসে এবং মেয়ে সন্তানের উপর কম আসে। তাই আল্লাহর রাসূল (সা.) ছেলের জন্য দুই এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল আকিকা দিতে বলেছেন। এখানে আরেকটি বিষয় জানা জরুরি। তা এই যে, যদি কারো ছেলে সন্তান হয় এবং তার দুটি ছাগল আকিকা দেয়ার সামর্থ না থাকে তাহলে একটি ছাগল দিলেই হবে। অনুরূপভাবে গরু-মহিষে দুই শরীক দিতে সক্ষম না হলে এক শরীক দিলেও চলবে।
পশু কোরবানির সাথে পশুত্বের কোরবানি করতে হবে : আমরা মানুষ। আমাদের মধ্যে যেমন ফেরেশতার স্বভাব আছে তেমনি পশুর স্বভাবও আছে। মানুষের মধ্যে যত ভালো গুণ রয়েছে, সেগুলো হলো-ফেরেশতার স্বভাব। আর হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা, অন্যায়ভাবে কারো উপর আক্রমণ করা, মানুষের ধন-সম্পদ অবৈধভাবে দখল করা, কারো অধিকার কেড়ে নেয়া ইত্যাদি হলো পশুর স্বভাব। পবিত্র কোরবানি ঈদে আমরা পশু কোরবানী করে থাকি। কোরবানির মূল ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে এই উপলক্ষে অর্জিত তাকওয়া বা আল্লাহভীতি দ্বারা নিজের পশু স্বভাবকে কোরবানি করি না। তাই আমাদের সমাজ থেকে অন্যায় অবিচার দূর হয় না। যদি পশু কোরবানির সাথে সাথে আমরা নিজেদের পশুস্বভাবকেও কোরবানি করতে পারি, তবেই আমাদের সমাজ হবে সুখময়, শান্তিময় ও আনন্দময়। আল্লাহর রাসূল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমলে মানুষ যেরূপ শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে জীবন যাপন করেছে, অনুরূপ পবিত্র স্বভাবের অধিকারী হয়ে আজও সেরূপ শান্তি ও নিরাপত্তা আমরা লাভ করতে পারি। এ জন্যে আমাদেরকে সাহাবায়ে কেরামের গুণাবলী অর্জন করতে হবে। তাদের মাঝে ছিল সব উত্তম গুণাবলী। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর মহা ত্যাগের মহা স্মৃতি পবিত্র কুরবানি অনুষ্ঠান থেকে লব্ধ শিক্ষা দ্বারা আমরা যাতে নিজেদের চরিত্র গঠন করতে পারি, আল্লাহ আমাদের সেই তওফিক দিন। এটাই একমাত্র কামনা।
কোন মন্তব্য নেই