সর্বশেষ আপডেট

ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ তথা নববর্ষ পালন করা কি জায়েজ?

উৎসব ধর্ম পালনের অংশঃ
উৎসব সাধারণত একটি জাতির ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে সম্পৃক্ত হয়। উৎসবের উপলক্ষ্যগুলো খোঁজ করলে পাওয়া যাবে তাতে রয়েছে উৎসব পালনকারী জাতির ধমনীতে প্রবাহিত ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্মীয় অনুভূতি, ধর্মীয় সংস্কার ও ধর্মীয় ধ্যান-ধারণার ছোঁয়া।

উদাহরণস্বরূপ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বড় দিন তাদের বিশ্বাসমতে স্রষ্টার পুত্রের জন্মদিন। মধ্যযুগে ইউরোপীয় দেশগুলোতে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালিত হতো ২৫শে মার্চ, এবং তা পালনের উপলক্ষ্য ছিল, ঐ দিন খ্রিষ্টীয় মতবাদ অনুযায়ী মাতা মেরীর নিকট এ মর্মে ঐশী বাণী প্রেরিত হয় যে, মেরী ঈশ্বরের পুত্র জন্ম দিতে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে ১৫৮২ সালে গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডারের সূচনার পর রোমক ক্যাথলিক দেশগুলো পয়লা জানুয়ারী নববর্ষ উদযাপন করা আরম্ভ করে। ঐতিহ্যগতভাবে এ দিনটি একটি ধর্মীয় উৎসব হিসেবেই পালিত হত। ইহুদীদের নববর্ষ ‘রোশ হাশানাহ’ ওল্ড টেস্টামেন্টে বর্ণিত ইহুদীদের ধর্মীয় পবিত্র দিন ‘সাবাত’ হিসেবে পালিত হয়। এমনিভাবে প্রায় সকল জাতির উৎসব-উপলরে মাঝেই ধর্মীয় চিন্তা-ধারা খুঁজে পাওয়া যাবে। আর এজন্যই ইসলামের নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিষ্কারভাবে মুসলিমদের উৎসবকে নির্ধারণ করেছেন। ফলে অন্যদের উৎসব মুসলিমদের সংস্কৃতিতে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: 
"প্রত্যেক জাতির নিজস্ব উৎসব রয়েছে, আর এটা আমাদের ঈদ।” [বুখারী: ৯৫২; মুসলিম: ৮৯২] 
বিখ্যাত মুসলিম পণ্ডিত ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এ সম্পর্কে বলেন: “উৎসব-অনুষ্ঠান ধর্মীয় বিধান, সুস্পষ্ট পথনির্দেশ এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেরই একটি অংশ, যা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
‘তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান এবং সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি।’ (সূরা আল-মায়িদাহ, ৫:৪৮)

‘প্রতিটি জাতির জন্য আমি অনুষ্ঠান [সময় ও স্থান] নির্দিষ্ট করে দিয়েছি যা তাদেরকে পালন করতে হয়।’ (সূরা আল-হাজ্জ্ব, ২২:৬৭) 
অতএব, অমুসলিমদের উৎসব-অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া এবং তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কোন সুযোগ কুরআন অনুসারী কোন মুসলমানের জন্য নেই। তাদের উৎসব-অনুষ্ঠানের সাথে একমত পোষণ করার অর্থ কুফরের সাথে একমত পোষণ করা। আর এসবের একাংশের সাথে একমত পোষণ করার অর্থ কুফরের শাখাবিশেষের সাথে একমত হওয়া। উৎসব-অনুষ্ঠানাদি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। উৎসব দ্বারা ধর্মগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। নিঃসন্দেহে তাদের সাথে এসব অনুষ্ঠান পালনে যোগ দেয়া একজন মুসলমানকে কুফরের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আর বাহ্যিকভাবে এগুলোতে অংশ নেয়া নিঃসন্দেহে পাপ। উৎসব অনুষ্ঠান যে প্রতিটি জাতির স্বকীয় বৈশিষ্ট্য, এর প্রতি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিষ্কার ইঙ্গিত করেছেন। তিনি বলেছেন: ‘প্রত্যেক জাতির নিজস্ব উৎসব রয়েছে। আর এটা আমাদের ঈদ।’ এছাড়া আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণিত: “রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন [মদীনায়] আসলেন, তখন তাদের দুটো উৎসবের দিন ছিল। তিনি (সা.) বললেন, ‘এ দুটো দিনের তাৎপর্য কি?’ তারা বলল, ‘জাহিলিয়াতের যুগে আমরা এ দুটো দিনে উৎসব করতাম।’ রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এ দিনগুলোর পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদের উত্তম কিছু দিন দিয়েছেন: কুরবানীর ঈদ ও রোযার ঈদ ।’ (সূনান আবু দাউদ) এ হাদীস থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ইসলাম আগমনের পর ইসলাম বহির্ভূত সকল উৎসবকে বাতিল করে দেয়া হয়েছে এবং নতুনভাবে উৎসবের জন্য দুটো দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সাথে অমুসলিমদের অনুসরণে যাবতীয় উৎসব পালনের পথকে বন্ধ করা হয়েছে।


নববর্ষ উদযাপন সম্পর্কে ইসলামের চেতনাঃ
ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর দাদা তাঁর পিতাকে পারস্যের নওরোযের দিন (নববর্ষের দিন) আলী রা.-এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং কিছু হাদিয়াও পেশ করেছিলেন। (হাদিয়াটি ছিল নওরোয উপল্েয। ফলে) আলী রা. বললেন, ‘‘নওরোযুনা কুল্লা ইয়াওম’’ মুমিনের প্রতিটি দিনই তো নববর্ষ। (আখবারু আবি হানিফা,সয়মারী) অর্থাৎ মুমিন প্রতিদিনই তার আমলের হিসাব নিকাশ করবে এবং নব উদ্যমে আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ করবে। ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলীর (র.) এ ফতোয়া দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবে প্রতিয়মান হচ্ছে যে, নববর্ষ উপল্েয পরষ্পরে উপহার বা প্রেজেন্টশন আদান প্রদান এবং শুভেচ্ছা বিনিময় নাজায়িয।
নতুন বছর নতুন কল্যাণ বয়ে আনে, দূরীভূত হয় পুরোনো কষ্ট ও ব্যর্থতার গ্লানি – এধরনের কোন তত্ত্ব ইসলামে আদৌ সমর্থিত নয়, বরং নতুন বছরের সাথে কল্যাণের শুভাগমনের ধারণা আদিযুগের প্রকৃতি-পুজারী মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণার অবশিষ্টাংশ। এ ধরনের কুসংস্কারের কোন স্থান ইসলামে নেই। বরং মুসলিমের জীবনে প্রতিটি মুহূর্তই পরম মূল্যবান হীরকখন্ড, হয় সে এই মুহূর্তকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করে আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয় করবে, নতুবা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে শাস্তির যোগ্য হয়ে উঠবে। তাই এক জন মুসলমানের কাছে বছরের প্রথম দিনের কোন বিশেষ কোন গুরুত্ব ও তাৎপর্য নেই। আর এ চেতনা ও বিশ্বাস থেকেই তো ইসলামে হিজরী নববর্ষ পালনের কোন প্রকার নির্দেশ দেয়া হয়নি। না কুরআনে এর কোন নির্দেশ এসেছে, না হাদীসে এর প্রতি কোন উৎসাহ দেয়া হয়েছে, না সাহাবীগণ এরূপ কোন উপল্য পালন করেছেন। এ থেকে বোঝা যায় যে, নববর্ষ ইসলামের দৃষ্টিতে কতটা তাৎপর্যহীন। এর সাথে জীবনে কল্যাণ-অকল্যাণের গতিপ্রবাহের কোন দূরতম সম্পর্কও নেই। আর সেেেত্র বাংলা নববর্ষের কি-ই বা তাৎপর্য থাকতে পারে ইসলামে? কেউ যদি এ ধারণা পোষণ করে যে, নববর্ষের প্রারম্ভের সাথে কল্যাণের কোন সম্পর্ক রয়েছে, তবে সে শিরকে লিপ্ত হল, অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করল। যদি সে মনে করে যে, আল্লাহ এই উপল্য দ্বারা মানবজীবনে কল্যাণ বর্ষণ করেন, তবে সে ছোট শিরকে লিপ্ত হল। আর কেউ যদি মনে করে যে নববর্ষের আগমনের এই ণটি নিজে থেকেই কোন কল্যাণের অধিকারী, তবে সে বড় শিরকে লিপ্ত হল। সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে যে, তার এ শিরকী বিশ্বাস তাকে ইসলামের গন্ডীর বাইরে নিয়ে যাবে। আর শিরক এমন অপরাধ যে, শিরকের ওপর কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে চিরতরে হারাম করে দেবেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন:
“নিশ্চয়ই যে কাউকে আল্লাহর সাথে শিরক করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন, আর তার বাসস্থান হবে অগ্নি।” (আল-মায়িদাহ, ৫:৭২) 
 ইদানিং পহেলা বৈশাখ উদযাপনের পদ্ধতিগুলো দেখলে প্রতীয়মান হয়, তারা বিশ্বাস করে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সাথে মঙ্গলময়তার সম্পর্ক রয়েছে। যা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। মুসলিমদেরকে এ ধরনের কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলে ইসলামের যে মূলতত্ত্ব সেই তাওহীদ বা একত্ববাদের ওপর পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।

হিন্দু ধর্মের বৈশিষ্ট্য ধারণঃ
বাংলা নববর্ষ উদযাপনের নামে যা যা হয়ে থাকে ওগুলো শত ভাগ হিন্দু ধর্ম চর্চা ছাড়া আর কিছু নয়। বৈশাখের ১তারিখ হিন্দুদের একটি মৌলিক ধর্মীয় উৎসবের দিন। এর আগের দিন তাদের চৈত্র সংক্রান্তি। আর পহেলা বৈশাখ হল ঘট পূজার দিন। তারা ঐ দিনে গণেশের পূজা করে। গণেশের বিভিন্ন মূর্তি তৈরি করে মঙ্গল শেভাযাত্রা করে। ভিন্ন ধর্মের উৎসবের দিনকে সার্বজনীনতার নামে এক জন মুসলমান কিভাবে নিজের উৎসবের দিন বানাতে পারে? গত ১৪ এপ্রিল ২০১৩ দৈনিক সমকালে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ত্ব ও প্রাবান্ধিক মুকুল দাসের একটি লেখা ছাপা হয়। লেখাটির শিরোনাম ছিল “বর্ণ-বিবর্ণ স্মৃতিরেখা”। তিনি এ লেখাতে তার শৈশবের পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে লিখেছেন। তিনি লিখেন, “ছেলেবেলার পহেলা বৈশাখের স্মৃতি এখনও ধূসর হয়ে ওঠেনি। … মনে পড়ে পহেলা বৈশাখের ভোরেই নতুন জামা-কাপড় গায়ে উঠত। … চৈত্রসংক্রান্তিতে হাটখোলায় বিরাট মেলা বসত। মেলা থেকে কেনা হতো সিদ্ধিদাতা গণেশের পট। সকাল ১০টা বাজার সমঙ্গ সঙ্গেই গণেশ পূজার আয়োজন করা হতো। পিএম বাগচীর পঞ্জিকা মতে, খেরো খাতায় পঞ্চম জর্জে মাথার সিঁদুররঞ্জিত ছাপ পড়ত। কাঁচা হলুদ দিয়ে লিখা হতো ‘শ্রী শ্রী সিদ্ধিদাতা গনেশায় নমঃ’। ফল-মিষ্টির উপচার সাজিয়ে পুরুত মশাই মন্ত্রোচ্চারণ করতেন। ঢাকি ঢাক বাজাত। পূজা শেষে প্রসাদ খেতাম।” উক্ত প্রবন্ধের শেষের দিকে এসে জনাব মুকুল দাস সাহেব তার বর্তমানের ১লা বৈশাখ উদযাপনের দৃশ্য লেখতে যেয়ে লিখেন, “জীবন থেকে হারিয়ে গেছে শৈশবের পহেলা বৈশাখ, যা আর কোন দিন ফিরে পাব না। … তবুও এখন পহেলা বৈশাখের … শোভাযাত্রা শেষ করে বাসায় ফিরে দেখি গৃহলী কালীবাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। হাতে পূজার থালা।” তার এ স্মৃতিচারণ মূলক লেখা থেকে সুষ্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে বহুকাল থেকে এখনো পর্যন্ত হিন্দুদের কাছে ১লা বৈশাখ ধর্মীয় উৎসবের দিন।
পহেলা বৈশাখ উদযাপনের জন্য যে সকল কর্মসূচি থাকে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালনো, মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা, ঢাক বাজানো, উলু ধ্বনি দেওয়া, বট গাছের তলায় জমায়েত। আবার এ শোভাযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ থাকে বিভিন্ন পশু-পাখির মূর্তি ও মুখোস। উল্লেখিত প্রতিটি কাজ হিন্দুদের ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্ম চর্চার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের কল্যাণ প্রার্থনার পদ্ধতিতে আমরা মুসলমানরাও কী কল্যাণ প্রার্থনা করব? তাদের ধর্ম মতে দেব-দেবীদের বিভিন্ন বাহন রয়েছে। যেমন: লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা, সরস্বতীর বাহন রাজহাঁস, গণেশের বাহন ইঁদুর, দুর্গার বাহন সিংহ, মনসার বাহন সাপ, কার্ত্তিকের বাহন ময়ূর, মহাদেবের বাহন ষাড়, যমরাজের বাহন কুকুর, ইন্দ্রের বাহন হাতি, ব্রক্ষ্মার বাহন পাতিহাঁস, বিশ্বকর্মার বাহন ঢেকি, শীতলার গাধা ইত্যাদি। আর যেহেতু যানবাহন ছাড়া দেব-দেবীদের আগমন-প্রস্থান সম্ভব নয়, অতএব, তাদের পূজাতে, তাদের শোভাযাত্রাতে দেব-দেবীদের যান-বাহনের পূজাও করতে হয়। আমরা মুসলমানরা কেন নববর্ষ উদযাপনের নামে ওদের দেব-দেবীর পিছনে ও দেব-দেবীদের যানবাহনের মূর্তির পিছনে পিছনে ঘোরব? আশরাফুল মাখলূকাত হয়ে পেঁচা, হনুমান, সিংহ, ষাঁড়, হাতি ইত্যাদি জান্তু-জানোয়ারের মুখোস আমাদের মুখে লাগিয়ে মানব জাতির অপমান কেন করব?

সূর্যকে স্বাগত জানানো ও বৈশাখকে সম্বোধন করে স্বাগত জানানোঃ
নববর্ষ উদযাপনের আর এক কর্মসূচি থাকে বছরের প্রথম প্রহরে প্রথম সূর্যকে স্বাগত জানানো ও রবি ঠাকুর রচিত বৈশাখ গান গাওয়া। এ ধরনের কর্মকান্ড মূলত সূর্য-পূজারী ও প্রকৃতি-পূজারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অনুকরণ মাত্র। যা আধুনিক মানুষের দৃষ্টিতে পুনরায় শোভনীয় হয়ে উঠেছে। সূর্য ও প্রকৃতির পূজা বহু প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন জাতির লোকেরা করে এসেছে। যেমন খ্রিষ্টপূর্ব ১৪ শতকে মিশরীয় “অ্যাটোনিসম” মতবাদে সূর্যের উপাসনা চলত। এমনিভাবে ইন্দো-ইউরোপীয় এবং মেসো-আমেরিকান সংস্কৃতিতে সূর্য পূজারীদেরকে পাওয়া যাবে। ১৯ শতাব্দীর উত্তর-আমেরিকায় কিছু সম্প্রদায় গ্রীষ্মের প্রাক্কালে পালন করত সৌর-নৃত্য এবং এই উৎসব উপলে পৌত্তলিক প্রকৃতি পূজারীরা তাদের ধর্মীয়-বিশ্বাসের পুনর্ঘোষণা দিত। মানুষের ভক্তি ও ভালবাসাকে প্রকৃতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টির প্রতি আবদ্ধ করে তাদেরকে শিরক বা অংশীদারিত্বে লিপ্ত করানো শয়তানের সুপ্রাচীন “কাসিকাল ট্রিক” বলা চলে। শয়তানের এই কূটচালের বর্ণনা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কুরআনে তুলে ধরেছেন:

সূর্যকে স্বাগত জানানো ও বৈশাখকে সম্বোধন করে স্বাগত জানানো: নববর্ষ উদযাপনের আর এক কর্মসূচি থাকে বছরের প্রথম প্রহরে প্রথম সূর্যকে স্বাগত জানানো ও রবি ঠাকুর রচিত বৈশাখ গান গাওয়া। এ ধরনের কর্মকান্ড মূলত সূর্য-পূজারী ও প্রকৃতি-পূজারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অনুকরণ মাত্র। যা আধুনিক মানুষের দৃষ্টিতে পুনরায় শোভনীয় হয়ে উঠেছে। সূর্য ও প্রকৃতির পূজা বহু প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন জাতির লোকেরা করে এসেছে। যেমন খ্রিষ্টপূর্ব ১৪ শতকে মিশরীয় “অ্যাটোনিসম” মতবাদে সূর্যের উপাসনা চলত। এমনিভাবে ইন্দো-ইউরোপীয় এবং মেসো-আমেরিকান সংস্কৃতিতে সূর্য পূজারীদেরকে পাওয়া যাবে। ১৯ শতাব্দীর উত্তর-আমেরিকায় কিছু সম্প্রদায় গ্রীষ্মের প্রাক্কালে পালন করত সৌর-নৃত্য এবং এই উৎসব উপলে পৌত্তলিক প্রকৃতি পূজারীরা তাদের ধর্মীয়-বিশ্বাসের পুনর্ঘোষণা দিত। মানুষের ভক্তি ও ভালবাসাকে প্রকৃতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টির প্রতি আবদ্ধ করে তাদেরকে শিরক বা অংশীদারিত্বে লিপ্ত করানো শয়তানের সুপ্রাচীন “কাসিকাল ট্রিক” বলা চলে। শয়তানের এই কূটচালের বর্ণনা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কুরআনে তুলে ধরেছেন:

“আমি তাকে ও তার জাতিকে দেখেছি, তারা আল্লাহকে ছেড়ে সূর্যকে সিজদা করছে এবং শয়তান তাদের কার্যাবলীকে তাদের জন্য শোভনীয় করেছে…” (সূরা আল নামল, ২৭:২৪)

বাংলা নববর্ষ উদযাপনে গানগেয়ে বৈশাখী সূর্যকে স্বাগত জানানো, আর কুরআনে বর্ণিত প্রাচীন জাতির সূর্যকে সিজদা করা, আর উত্তর আমেরিকার আদিবাসীদের সৌর-নৃত্য এগুলোর মধ্যে চেতনা ও বিশ্বাসগত কোন পার্থক্য নেই, বরং এ সবই স্রষ্টার দিক থেকে মানুষকে অমনোযোগী করে সৃষ্টির আরাধনার প্রতি তার আকর্ষণ জাগিয়ে তোলার শয়তানী উদ্যোগ। বিশ্ব কবি তার ধর্ম বিশ্বাস থেকে তার বৈশাখ কবিতাতে ভৈরব রুদ্র বৈশাখের কাছে মিনতি করে অনেক কিছু চেয়েছেন। সেটা তার ধর্ম বিশ্বাস। কিন্তু এক জন মুসলমান কিভাবে নিজ ধর্ম বিশ্বাসকে এড়িয়ে যেয়ে কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে কিছু চায়? 
নর-নারীর অবাধ মেলামেশাঃ
পহেলা বৈশাখ বা অন্য কোনো উপল্েয ছেলে-মেয়েদের বেপর্দা ও বেহায়পনার সুযোগ দিবেন না। অবাধ মেলামেশার সুযোগ দিবেন না। তাদেরকে বুঝান ও নিয়ন্ত্রণ করুন। আপনি মসজিদে নামায আদায় করছেন আর আপনার ছেলে-মেয়ে পহেলা বৈশাখের নামে বেহায়াভাবে শোভাযাত্রা, মিছিল বা উৎসব করে বেড়াচ্ছে। আপনার ছেলে-মেয়ের পাপের জন্য আপনার আমলনামায় গোনাহ জমা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়। অন্য পাপ আর অশ্লীলতার পার্থক্য হলো, যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-সন্তানদের বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার সুযোগ দেয় তাকে ‘‘দাইউস’’ বলে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম করেছেন। মাদকাসক্ত, পিতা-মাতার অবাধ্য এবং দাইউস, যে তার পরিবারের মধ্যে ব্যভিচারকে প্রশ্রয় দেয়”। (মুসনাদে আহমাদ: ২/৬৯) ব্যবসায়িক, প্রশাসনিক, রাজনৈতিক বা সামাজিক কোনো স্বার্থে অনেক মুসলিম পহেলা বৈশাখ উপল্েয ছেলে-মেয়েদের অবাধ মেলা-মেশা ও বেহায়াপনার পথ খুলে দেওয়ার জন্য মিছিল, শোভাযাত্রা, মেলা ইত্যাদির পে অবস্থান নেন। মনে রাখবেন, আপনার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য এরচেয়ে ভয়ঙ্কর আর কিছুই হতে পারে না। অশ্লীলতা প্রসারের ভয়ঙ্কর পাপ ছাড়াও ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা শুনুনঃ ‘‘যারা চায় যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার ঘটুক তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন যা তোমরা জান না।’’ (সূরা ২৪ নূর: ১৯ আয়াত) ব্যভিচারের প্রতি আহবান জানানো শয়তানের কাসিকাল ট্রিকগুলোর একটি। যেটাকে কুরআনে “ফাহিশাহ” শব্দের আওতায় আলোচনা করা হয়েছে। শয়তানের এ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র বস্তু আছে তা থেকে তোমরা আহার কর আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্র“। সে তো তোমাদের নির্দেশ দেয় মন্দ ও অশ্লীল কাজ [ব্যভিচার, অবাধ মেলামেশা, মদ্যপান, হত্যা ইত্যাদি] করতে এবং আল্লাহ সম্বন্ধে (ইসলাম সম্বন্ধে) এমন সব বিষয় বলতে যা তোমরা জান না।” (সূরা বাক্বারাহ্, ২:১৬৮-১৬৯) এছাড়া যা কিছুই মানুষকে ব্যভিচারের দিকে প্রলুব্ধ ও উদ্যোগী করতে পারে, তার সবগুলোকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াতের দ্বারা: “তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। অবশ্যই এটা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পন্থা।” (সূরা আল ইসরা, ১৭:৩২) ব্যভিচারকে উৎসাহিত করে এমন বিষয়, পরিবেশ, কথা ও কাজ এ আয়াত দ্বারা নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। আমাদের কর্তব্য অন্তর থেকে ব্যভিচারকে এবং ব্যাভিচারের প্রতি প্ররোচনা দানকারী সব কিছুর চর্চাকে ঘৃণা করা। এ ব্যভিচার বিভিন্ন অঙ্গের দ্বারা হতে পারে, যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন: “…চোখের যিনা হচ্ছে তাকানো, জিহ্বার যিনা হচ্ছে কথা বলা, অন্তর তা কামনা করে এবং পরিশেষে যৌনাঙ্গ একে বাস্তবায়ন করে অথবা প্রত্যাখ্যান করে।” [বুখারী:৬২৪৩; মুসলিম: ২৬৫৭]


দেখা, ছোঁয়া, শোনা ও কথার দ্বারা সংঘটিত যিনাই মূল ব্যভিচার সংঘটিত হওয়াকে বাস্তব রূপ দান করে। তাই জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য এমন সকল স্থান থেকে শতহাত দূরে থাকা কর্তব্য, যে সকল স্থানে দেখা, ছোঁয়া, শোনা ও কথার ব্যভিচারের সুযোগকে উন্মুক্ত করা হয়।
বাদ্য যন্ত্রের ব্যবহারঃ
নববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকে সংগীত ও বাদ্য। রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেছেন: “আমার উম্মাতের মধ্যে কিছু লোক হবে যারা ব্যভিচার, রেশমী বস্ত্র, মদ এবং বাদ্যযন্ত্রকে হালাল বলে জ্ঞান করবে।” [বুখারী:৫৫৯০]

আবহমান কালের বাঙালীর সংস্কৃতি(?)ঃ
আমাদের অনেক বন্ধু পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ, শোভাযাত্রা ইত্যাদিকে বাঙালীর আবহমান কালের সংস্কৃতি বলে চালানোর পায়তারা করে থাকেন। অথচ, বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা ১৯৬৭ সাল থেকে এবং শোভাযাত্রার সূচনা ১৯৮৯ সাল থেকে। তাহলে এ আয়োজনকে কিভাবে বাঙালীর সংস্কৃতি দাবি করা হয়? আজ থেকে ১০০ বছর আগের বাঙালী কোন মা, বধু, কণ্যা কী স্বপ্ন দেখতেন যে, কোন পর পুরুষ তার শরীরের লোভনীয় অঙ্গে আলপনা এঁকে দিবে, সে কোন পর পুরুষকে মুখে তোলে ইলিশ-পান্তা খাওয়াবে? বিগত হাজার বছরের বাঙালী নারী সমাজ পরপুরুষের সান্নিধ্যকে ঘৃণা করে এসেছে। বাঙালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য হচ্ছে পর্দা ও শালীনতা বোধের গর্বিত ইতিহাস। ছেলে-মেয়ে এক সাথ বটতলায় বসা বাঙালীর সংস্কৃতি নয়। হ্যাঁ, শরৎ চন্দ্রের ভাষায় ভাষা মিলিয়ে কেউ যদি বলেন, ‘আজ বিকেলে বাঙালী বনাম মুসলমান ছেলেদের মাঝে ফুটবল খেলা হবে’ তবে তিনি বর্ষবরণের প্রচলিত আয়োজনগুলোকে বলতে পারেন বাঙালী সংস্কৃতি। কিন্তু একজন মুসলমান কখনো বর্ষবরণের এ আয়োজনগুলোকে “আমাদের সংস্কৃতি” বলতে পারে না।

আমরা ভাষায় বাঙালী, এ কথা সত্য। এর চেয়েও বড় সত্য কথা হচ্ছে, বিশ্বাস ও সংস্কৃতিতে আমরা মুসলমান। আমাদের সব চেয়ে বড় পরিচয় আমরা মুসলমান। আমাদের সব কিছুই অন্যদের থেকে আলাদা। জন্ম থেকে নিয়ে বিবাহ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের সকল কাজ-কর্ম, আচার-আচরণ, রীতি-রেওয়াজ ইসলামের আলোয় উদ্ভাসিত। ধর্ম ভেদে সংস্কৃতি ভিন্ন হবেই। আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি ইসলামের বাইরে যেয়ে অন্য কিছুর চর্চা করবে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না।” (আলে ইমরান ৩:৮৫) তাই সকল ধর্মের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য সার্বজনীন সংস্কৃতি বলতে উদ্ভট কোন কিছুর অস্তিত্ত্ব এ পৃথিবীতে নেই। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে সে তাদের অন্তুর্ভূক্ত।” (আবূ দাউদ:৪০৩৩)

উপসংহারঃ
পহেলা বৈশাখকে উৎসব দিবসের মর্যাদা দিয়ে সার্বজনীন উৎসবের নামে ইদানিং যা হয়ে থাকে তা আমাদের ঈমান ও ইবাদাতের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ; কুফুর ও শিরিকে পরিপূর্ণ। আমরা হিন্দু ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের ব্যাপারে সহনশীল। তারা তাদের ধর্ম স্বাধীন ভাবে পালন করবে, এতে আমাদের ও আমাদের ধর্মের কোন আপত্তি নেই। তবে আমাদর বক্তব্য হচ্ছে, মুসলমান তরুণ প্রজন্মের জন্য। সার্বজনীনতার নামে, সংস্কৃতির নামে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ইসলাম থেকে দূরে সরানো হচ্ছে। “আমরা আল্লাহকে রব পেয়ে, ইসলামকে জীবনব্যাবস্থা পেয়ে ও মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নবী পেয়ে সন্তুষ্ট।” আমাদের উৎসবের জন্য ইসলামের বাইরে আর কোন দিবসের ও আয়োজনের প্রয়োজন নেই।


২টি মন্তব্য: