সর্বশেষ আপডেট

নামাজের সঠিক নিয়ম কানুন


ইসলামের প্রথম ভিত্তি হল নামাজ। এ নামাজ ঠিককরে আদায় করতে পারলে আল্লাহর ওয়াদা অনুসারে পরকালের হিসাব অনেক সহজ হবে। সংগৃহীত পোষ্টটি থেকে আমরা নামাজের নিয়ম রীতিগুলো আরেকটু ঝালাই করে নিতে পারি। আল্লাহ আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন।

১। আযান

‘আযান’ অর্থ, ঘোষণা ধ্বনি। পারিভাষিক অর্থ, শরী‘আত নির্ধারিত আরবী বাক্য সমূহের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে উচ্চকণ্ঠে ছালাতে আহবান করাকে ‘আযান’ বলা হয়। ১ম হিজরী সনে আযানের প্রচলন হয়। মিরআত- ২/৩৪৪-৩৪৫-সালাত অধ্যায়-৪-আযান অনু-৪

সূচনা: ওমর ফারূক (রাঃ) সহ একদল সাহাবী একই রাতে আযানের একই স্বপ্ন দেখেন ও পরদিন সকালে ‘অহি’ দ্বারা প্রত্যাদিষ্ট হ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা সত্যায়ন করেন এবং বেলাল (রাঃ)-কে সেই মর্মে ‘আযান’ দিতে বলেন।

আবু দাঊদ হা/৪৯৯, ‘আওনুল মা‘বূদ হা/৪৯৪-৪৯৫, ২/১৬৫-৭৫; আবুদাঊদ, দারেমী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৬৫০।

সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) সর্বপ্রথম পূর্বরাতে স্বপ্নে দেখা আযানের কালেমা সমূহ সকালে এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে বর্ণনা করেন। পরে বেলালের কণ্ঠে একই আযান ধ্বনি শুনে হযরত ওমর (রাঃ) বাড়ী থেকে বেরিয়ে চাদর ঘেঁষতে ঘেঁষতে ছুটে এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলেন, ‘যিনি আপনাকে ‘সত্য’ সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি আমিও অনুরূপ স্বপ্ন দেখেছি’(আবু দাউদ-আউনাল মাবুদ—৪৯৫, মিশকাত-৬৫০)।একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) ‘ফালিল্লা-হিল হাম্দ’ বলে আল্লাহর প্রশংসা করেন’।একটি বর্ণনা মতে ঐ রাতে ১১ জন ছাহাবী একই আযানের স্বপ্ন দেখেন’।উল্লেখ্য যে, ওমর ফারূক (রাঃ) ২০ দিন পূর্বে উক্ত স্বপ্ন দেখেছিলেন।কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ আগেই বলেছে দেখে লজ্জায় তিনি নিজের কথা প্রকাশ করেননি।(আবু দাউদ-আউনাল মাবুদস-৪৯৪)


আযানের দোয়ার আগেঃ-

ক) নবী(সঃ) বলেছেন, ‘যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাও, তখন সে যা বলে, তোমরা ঠিক তারই পুনরাবৃত্তি কর।

খ) তবে মুয়াজ্জিন যখন ‘হাইয়া-লাস সালাহ’ এবং ‘হাইয়া আলাস ফালাহ’ বলে,তখন তোমরা “লা হাওলা ওলা-কুয়াতা ইল্লাহ বিল্লাহ”( নেই কোন ক্ষমতা,নেই কোন শক্তি আল্লাহ ব্যতীত) বল। বুখারী-১/১৫২,মুসলিম-৭৪৯

গ) তারপর “আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহাদাহু লা শরীকালাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু, রাদীতু বিল্লাহি রাব্বান, ওয়া বিমুহাম্মাদিন রাসুলান, ওয়া-বিল ইসলামী দ্বীনান”।

অর্থঃ- আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি- আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকারের কোন মাবুদ নাই।তিনি এক, তার কোন অংশীদার নাই। আর মুহাম্মাদ(সঃ) তার বান্দা ও প্রেরিত রাসুল(সঃ)। আমি আল্লাহকে প্রভু হিসাবে ও মুহাম্মাদ(সঃ)কে রাসুল হিসাবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসাবে লাভ করে পরিতৃপ্ত”। মুসলিম-১/২৯০,ইবনে খুজায়মা-১/২২০

ঘ) তারপর দরুদে ইব্রাহিম পড়বে। মুসলিম-১/২৮৮ ।উল্লেখ্য যে, ফজরের আযানে ‘আছ ছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম’-এর জওয়াবে ‘ছাদাক্বতা ওয়া বারারতা’ বলার কোন ভিত্তি নেই। অমনিভাবে এক্বামত-এর সময় ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালা-হ’-এর জওয়াবে‘আক্বা-মাহাল্লা-হু ওয়া আদা-মাহা’ বলা সম্পর্কে আবুদাঊদে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’।‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ -এর জওয়াবে ‘সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম’ বলারও কোন দলীল নেই। আবু দাউদ-৫২৮,মিশাকাত-৬৭০

ঙ) আযান শুনার পরঃ-

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রববা হা-যিহিদ দা‘ওয়াতিত তা-ম্মাহ, ওয়াছ ছলা-তিল ক্বা-য়েমাহ, আ-তে মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাহ, ওয়াব‘আছ্হু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আদ্তাহ’ ।

অনুবাদ: হে আল্লাহ! (তাওহীদের) এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত ছালাতের তুমি প্রভু। মুহাম্মাদ (ছাঃ) -কে তুমি দান কর ‘অসীলা’ (নামক জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান) ও মর্যাদা এবং পৌঁছে দাও তাঁকে (শাফা‘আতের) প্রশংসিত স্থান ‘মাক্বামে মাহমূদে’ যার ওয়াদা তুমি তাঁকে করেছ’।

চ) রাসূলুল্লাহ (সঃ) এরশাদ করেন ‘যে ব্যক্তি আযান শুনে এই দো‘আ পাঠ করবে, তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হবে’। বুখারী, মিশকাত-৬৫৯

ছ) আযান ও ইকামতের মাঝের সময়টাতে দুয়া করলে, সেই দোয়া কবুল হয়। তিরমিযী,আবু দাউদ,আহমদ

২। পবিত্রতা

সালাতের আবশ্যিক পূর্বশর্ত হ’ল ‘ত্বাহারৎ বা পবিত্রতা’অর্জন করা। পবিত্রতা দু’প্রকারের : আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক, অর্থাৎ দৈহিক। ‘আভ্যন্তরীণ পবিত্রতা’ বলতে বুঝায় হৃদয়কে যাবতীয় শিরকী আক্বীদা ও ‘রিয়া’ মুক্ত রাখা এবং আল্লাহর ভালবাসার ঊর্ধ্বে অন্যের ভালবাসাকে হৃদয়ে স্থান না দেওয়া। ‘দৈহিক পবিত্রতা’ বলতে বুঝায়, শরয়ী পদ্ধতিতে ওযূ, গোসল বা তায়াম্মুম সম্পন্ন করা।

আল্লাহ বলেন, ২২২)- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ (অন্তর থেকে) তওবাকারী ও (দৈহিকভাবে) পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন’। বাক্বারাহ -২২২

রাসূলুল্লাহ (সঃ) এরশাদ করেন, ‘পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত কারু ছালাত কবুল হয় না এবং হারাম মালের ছাদাক্বা কবুল হয় না’। মুসলিম,মুত্তাফাক আলাইহে,মিশকাত-৩০১,৩০০-পবিত্রতা অধ্যায়- ‘যা ওযু ওয়াজিব করে’ অনু–১।

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন,‘তোমরা ছালাত আদায় কর সেভাবে, যেভাবে আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখছ’।

অজু করা

আভিধানিক অর্থ স্বচ্ছতা । পারিভাষিক অর্থে পবিত্র পানি দ্বারা শরীয়া পদ্ধতিতে হাত, মুখ, পা ধৌত করা ও (ভিজা হাতে) মাথা মাসাহ করাকে ‘ওযূ’ বলে।

ওযূর ফরয : ওযূর মধ্যে ফরয হ’ল চারটি। ১. কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া ও ঝাড়া সহ পুরা মুখমন্ডল ভালভাবে ধৌত করা। ২. দুই হাত কনুই সমেত ধৌত করা, ৩. (ভিজা হাতে) কানসহ মাথা মাসাহ করা ও ৪. দুই পা টাখনু সমেত ধৌত করা। নীচের আয়াতের চারটি ফরয বাদে ওযূর বাকী সবই সুন্নাত।

যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

অর্থ : ‘হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা ছালাতের জন্য প্রস্ত্তত হও, তখন তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় কনুই সমেত ধৌত কর এবং তোমাদের মাথা মাসাহ কর ও পদযুগল টাখনু সমেত ধৌত কর…..’ মায়েদাহ- ৬

অজুর দোয়া

উচ্চারণ : আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকা লাহূ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহু। আল্লা-হুম্মাজ্‘আল্নী মিনাত্ তাউয়াবীনা ওয়াজ্‘আল্নী মিনাল মুতাত্বাহ্হিরীন।

অর্থ : ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি একক ও শরীক বিহীন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল’ (মুসলিম)।হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তওবাকারীদের ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন!! (তিরমিযী)। 

৩। নিয়ত করা

‘নিয়ত’ অর্থ ‘সংকল্প’। ছালাতের শুরুতে নিয়ত করা অপরিহার্য।রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘সকল কাজ নিয়তের উপরে নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাই-ইপাবে, যার জন্য সে নিয়ত করবে’।মুখে নিয়ত পাঠের প্রচলিত রেওয়াজটিদ্বীনের মধ্যে একটিনতুন সৃষ্টি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সালাতে এর কোন স্থান নেই। অনেকেছালাত শুরুর আগেই জায়নামাযের দো‘আ মনে করে‘ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু…’ পড়েন। এইরেওয়াজটি সুন্নাতের বরখেলাফ। মূলতঃ জায়নামাযের দো‘আ বলে কিছু নেই। [মুত্তাফাক আলাইহ; মিশকাত, হা ০১]

৪। তাকবীরে তাহরীমার দোয়া / সানা

ওযূ করার পর ছালাতের সংকল্প করে ক্বিবলামুখী দাঁড়িয়ে ‘আল্লা-হুআকবর’ বলে দু’হাত উঠিয়ে তাকবীরে তাহরীমা দিতে হবে।

ক) উচ্চারণ :আল্লা-হুম্মা বা-‘এদ বায়নী ওয়া বায়না খাত্বা-ইয়া-ইয়া, কামাবা-‘আদতা বায়নাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিবি। আল্লা-হুম্মা নাকক্বিনী মিনালখাত্বা-ইয়া, কামাইউনাকক্বাছ ছাওবুল আব্ইয়াযু মিনাদ দানাসি। আল্লা-হুম্মাগ্সিলখাত্বা-ইয়া-ইয়াবিল মা-য়িওয়াছ ছালজিওয়াল বারাদি’।

অনুবাদ :হে আল্লাহ! আপনি আমার ও আমার গোনাহ সমূহের মধ্যে এমন দূরত্ব সৃষ্টিকরে দিন, যেমন দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ!আপনি আমাকেপরিচ্ছন্ন করুন গোনাহ সমূহ হ’তে, যেমন পরিচ্ছন্ন করা হয় সাদা কাপড়ময়লা হ’তে। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহ সমূহকে ধুয়ে ছাফ করে দিন পানিদ্বারা, বরফ দ্বারা ওশিশির দ্বারা’।[মুত্তাফাক আলাইহ; মিশকাত ৮১২, অনু ১১]

সানার জন্য অন্য দো‘আও রয়েছে। তবে এই দো‘আটি সর্বাধিক বিশুদ্ধ।

অথবা

খ) সুবহানাকা আল্লাহুমা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তা-আ’লা-জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।

অর্থঃ ‘হে আল্রাহ, তুমি পবিত্র সকল প্রশংসা তোমারই জন্য। তোমার নাম মহিমান্বিত, তোমার সত্তা অতি উচ্চে প্রতিষ্ঠিত এবং তুমি ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোন মাবুদ নাই।

আবু দাউদ,নাসায়ী,তিরমিযী-১/৭৭,ইবনে মাজা-১/৩৫,সুনানে আরবায়া, সহীহ তিরমিযী-২৪২, ইবনে মাজা-৮০৪ 

৫। ক্বিরাত

সূরা ফাতিহা : ‘ছানা’ পড়েআ‘ঊযুবিল্লাহিমিনাস শয়তানের রাজিম,বিসমিল্লাহর রাহমানির রাহিম সহ সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে এবং অন্যান্য রাক‘আতে কেবলবিসমিল্লাহবলবে।সুরা ফাতেহা প্রতিটি আয়াতের শেষে থেমে থেমে পড়তে হবে।কারন মহান আল্লাহ সুরা ফাতেহার প্রতি আয়াতের শেষে জবাব দেন। জেহরী ছালাত হ’লেসূরায়ে ফাতিহা শেষে সশব্দে ‘আমীন’ বলবে।

সুরা ফাতেহার পর যেকোন ১টি সুরা পড়ুন। যদি ফরয নামায হয় তাহলে, সুরা ফাতেহার সাথে ২টি অন্য সুরা পড়তে হবে। যদি সুন্নাত হয় ৪টি অন্য সুরা পড়তে হবে। ফরয নামায ২ রাকাতের বেশি হলে শুধুমাত্র প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়তে হবে। সুরার ক্রম হবে “সুরা বাকারা থেকে সুরা নাসের” (১ থেকে ১১৪) দিকে। যদি প্রথম সুরাটি ‘সুরা লাহাব’ হয়, তাহলে দ্বিতীয়টা হবে সুরা ‘ফালাক’ আর তৃতীয়টা হবে সুরা ‘নাস’। সুরাগুলো ক্রমান্বয়ে ‘বড় থেকে ছোট’ হতে থাকবে।

৬। রুকু

রাফাউল ইয়াদেনঃ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দু’হাত কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠিয়ে ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করে রুকূতে যাবে।

রুকুর দুআঃ ‘সুবহা-না রবিবয়াল ‘আযীম’ (মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি মহান) কমপক্ষে ৩ বার পড়বে। অথবা

২য় দুআঃ সুব্বুহুন ক্বুদ্দুসুন রব্বুল মালাই-কাতি ওয়ার্‌-রূহ (ফেরেশতামন্ডলী ও জিবরাইলের প্রভু আল্লাহ অতি নিরন্জন, অসীম পবিত্র)

অথবা

৩য় দুআঃ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়া-বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী (হে আল্লাহ, আমি তোমার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি। হে প্রভু, তুমি আমাকে ক্ষমা কর।) এই দুয়াটি রুকু/সেজদা দুই জায়গাতেই প্রযোজ্য।

মুত্তাফাক আলাইহে,মিশকাত-৮৭১, নায়লুল আওতার- ৩/১০৬ ।

৭। কওমা

রুকূ থেকে উঠে সোজা ও সুস্থিরভাবে দাঁড়াবে। এ সময় ‘রাফউল ইয়াদেন’ করবে এবং ইমাম ও মুক্তাদী সকলে বলবেঃ

সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ (আল্লাহ তার কথা শোনেন, যে তার প্রশংসা করে)।

অতঃপর – রববানা লাকাল হাম্‌দ (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা)।

অতঃপর – হাম্‌দান কাছীরান ত্বাইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহি’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্য অগণিত প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতময়)।

৮। সিজদা

ক্বওমার দো’আ পাঠ শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে প্রথমে দু’হাত ও পরে দু’হাঁটু মাটিতে রেখে সিজদায় যাবে। এ সময় স্থিরভাবে বসে দো’আ পড়বে। অতঃপর ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দ্বিতীয় সিজদায় যাবে ও দো’আ পড়বে। রুকূ ও সিজদায় কুরআনী দো’আ পড়বে না।

ক) সিজদার দুআঃ সুবহা-না রবিবয়াল আ’লা ।অর্থঃ ‘মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি সর্বোচ্চ’।কমপক্ষে তিনবার পড়বে। রুকূ ও সিজদার অন্য দো’আও রয়েছে।

অথবা

খ) উচ্চারনঃ সুবহ-নাকা আল্লাহ-হুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লা-হুম্মাহফিরলী ।

অর্থঃ- ‘হে আল্লাহ,হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার প্রশংসার সাথে আপনার পবিত্রতা ঘোষনা করছি। হে আল্লাহ, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।এই দুয়াটি রুকু/সেজদা দুই জায়গাতেই প্রযোজ্য। 

মুত্তাফাক আলাইহে,মিশকাত-৮৭১, নায়লুল আওতার- ৩/১০৬ ।

৯। জালসায়ে ইস্তেরা-হাতঃ- ২য় ও ৪র্থ রাক’আতে দাড়াবার আগের মহুর্তে, সিজদা থেকে উঠে, সামান্য সময়ের জন্য স্থির হয়ে বসা সুন্নাত।এটাকে ‘স্বস্তির বৈঠক’ বলে। বুখারী,মিশকাত-৭৯৬-অনুচ্ছেদ-১০, নায়ল-৩/১৩৮ “যখন রাসুলুল্লাহ(সঃ) ২য় সিজদা হতে মাথা উঠাতেন,তখন বসতেন এবং মাটির উপরে(দুই হাতে) ভর দিতেন, তারপর দাড়াতেন। বুখারী-ফাৎহ সহ-৮২৪- ‘ওঠার সময় কিভাবে মাটির উপরে ভর দেবে’, অনুচ্ছেদ- ১৪৩-আযান অধ্যায়-১৩-, ২/৩৫৩-৫৪ পৃঃ

দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো’আ :

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী ওয়ারহাম্নী ওয়াজ্বুরনী ওয়াহ্দিনী ওয়া ‘আ-ফেনী ওয়ার্ঝুক্বনী ।

অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপরে রহম করুন, আমার অবস্থার সংশোধন করুন, আমাকে সৎপথ প্রদর্শন করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন ও আমাকে রূযী দান করুন’।

১০। বৈঠক

যদি দুইয়ের অধিক রাকা’আত এর সলাত হয়, তখন প্রতি জোড় সংখ্যার রাকা’আত এর পরবর্তী বিজোড় সংখ্যার রাকা’আত এর (ক্বিরাতের) জন্য দাড়ানোর পর রাফাউল ইয়াদাইন করতে হয়। যেমনঃ সলাত ৩/৪ রাকা’আত হলে, ২য় রাকা’আত এর বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে ৩য় রাকা’আত এর জন্য দাড়ানোর পর রাফাউল ইয়াদাইন করবেন। ৫ রাকা’আত এর (যেমনঃ বিতর) সলাতে ৪র্থ রাকা’আতের বৈঠক শেষে দাড়িয়ে রাফাউল ইয়াদাইন করবেন। একইভাবে, ৭ রাকা’আত এর (যেমনঃ বিতর) সলাতে ৬ষ্ঠ রাকা’আতের বৈঠক শেষে দাড়িয়ে রাফাউল ইয়াদাইন করবেন।

বৈঠকের দোআ সমূহ :

ক) তাশাহ্হুদ (আত্তাহিইয়া-তু):

বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুলগুলো বাম হাঁটুর প্রান্ত বরাবর ক্বিবলামুখী ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে।এবং ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ থাকবে ও শাহাদাত অঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করবে(মুসলিম,মিশকাত,-৯০৬,৯০৮)।বৈঠকের শুরু থেকেসালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত ইশারা করতে থাকবে(মিরআত-৩/২২৯-আলবানী,মিশকাত-৯০৬ টীকা)।সাহেবে মির‘আত ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (১৯০৪-৯৪ খৃবলেন, আঙ্গুল ইশারার মাধ্যমে আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেওয়া হয়।(মির আত-৩/২২৯)দো‘আ পাঠের সময় আকাশের দিকে তাকানোনিষেধ।ইশারার সময় আঙ্গুল দ্রুত নাড়ানো যাবে না, যা পাশের মুছল্লীর দৃষ্টি কেড়ে নেয়’(নাসাঈ-১২৭৬,মুসলিম,মিশকাত,-৯৮৩-সালাত৪-অনু-১৯)।‘আশহাদু’ বলার সময় আঙ্গুল উঠাবে ও ইল্লাল্লা-হ’ বলার পর আঙ্গুল নামাবে’ বলে যে কথা চালু আছে তারকোন ভিত্তি নেই(আলবানী,মিশকাত-৯০৬-পৃষ্ঠা-১৪০, মির’আত-৩/২২৯) ।মুছল্লীর নযর ইশারার বাইরে যাবে না।

উচ্চারণ : আত্তাহিইয়া-তু লিল্লা-হি ওয়াছ্ ছালাওয়া-তু ওয়াত্ ত্বাইয়িবা-তু আসসালা-মু ‘আলায়কা আইয়ুহান নাবিইয়ু ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আসসালা-মু ‘আলায়না ওয়া ‘আলা ‘ইবা-দিল্লা-হিছ ছা-লেহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আনণা মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহু ।

অনুবাদ : যাবতীয় সম্মান, যাবতীয় উপাসনা ও যাবতীয় পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সমৃদ্ধি সমূহ নাযিল হউক। শান্তি বর্ষিত হউক আমাদের উপরে ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাগণের উপরে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। 

খ) দরূদ :

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া ‘আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লায়তা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লে ইব্রা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া ‘আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা বা-রক্তা ‘আলা ইব্রা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লে ইব্রা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ ।

অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আপনি রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।

৩ কিংবা ৪ রাকাত সালাত হলে, প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের সাথে দরুদ পড়া যেতে পারে।যদিও এটা আমাদের দেশে প্রচলিত না। তবে শায়খ নাসিরউদ্দিন আলবানী সহীহ হাদিসের ভিত্তিতে একথা বলেছেন।

গ) দো’আয়ে মাছূরাহ :

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফ্সী যুলমান কাছীরাঁও অলা ইয়াগ্ফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্তা, ফাগ্ফিরলী মাগফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা ওয়ারহাম্নী ইন্নাকা আন্তাল গাফূরুর রহীম’।

অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের উপরে অসংখ্য যুলুম করেছি। ঐসব গুনাহ মাফ করার কেউ নেই আপনি ব্যতীত। অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ হতে বিশেষভাবে ক্ষমা করুন এবং আমার উপরে অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।

অথবা

উচ্চারণ :আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন্ ‘আযা-বি জাহান্নামা ওয়াআ‘ঊযুবিকা মিন্ ‘আযা-বিল ক্বাব্রে, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন্ ফিৎনাতিল মাসীহিদ্দাজ্জা-লি, ওয়াআ‘ঊযুবিকা মিন ফিৎনাতিল মাহ্ইয়া ওয়াল মামা-তি।

অর্থ :হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় ভিক্ষা করছি জাহান্নামের আযাব হতে, কবরের আযাবহতে, দাজ্জালের ফিৎনা হতে এবং জীবন ও মৃত্যুকালীন ফিৎনা হতে।

ঘ) তারপরের দোয়াঃ- উচ্চারনঃ- ‘আল্লা-হুম্মা রব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আ-খেরাতে হাসানাতাও, ওয়া-ক্বিনা আযা-বান্না-র’।

অর্থঃ- ‘হে আল্লাহ ! হে আমাদের পালনকর্তা, তুমি আমাদেরকে দুনিয়াতে মংগল দাও ও আখেরাতে মংগল দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাচাও।‘ 

ঙ) তারপরের দোয়াঃ-

উচ্চারণ:আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু অমা আখখারতু, অমা আসরারতুঅমা আ‘লানতু, অমা আসরাফতু, অমা আনতা আ‘লামু বিহী মিন্নী; আনতালমুক্বাদ্দিমু ওয়া আনতালমুআখখিরু, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা’ ।

অনুবাদ: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পূর্বাপর গোপন ও প্রকাশ্য সকল গোনাহ মাফ কর (এবং মাফ কর ঐসব গোনাহ) যাতে আমি বাড়াবাড়ি করেছি এবং ঐসব গোনাহ যে বিষয়েতুমি আমার চাইতেবেশী জানো। তুমি অগ্র-পশ্চাতের মালিক।তুমি ব্যতীত কোন উপাস্যনেই’।মুসলিম,মিশকাত-৮১৩-সালাত অধ্যায়-“তাকবীরের পরে কি পড়তে হয়?”-অনু-১১

চ) ‘সালাম ফিরানোর’ আগে ও সবশেষ দোয়াঃ-

উচ্চারনঃ- ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আউযু বিকা মিনান্না-র’।

অর্থঃ- হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকটে জান্নাত প্রর্থনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ চাচ্ছি।

১১। সালাম

প্রথমে ডানে ও পরে বামে ‘আসসালামু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ (আল্লাহর পক্ষ হতে আপনার উপর শান্তি ও অনুগ্রহ বর্ষিত হৌক!) বলে সালাম ফিরাবে(আবু দাউদ,তিরমিযী,মিশকাত-৯৫০-‘তাশাহহুদ দোয়া-অনু-১৭)।প্রথম সালামের শেষে ‘ওয়া বারাকা-তুহু’ (এবং তাঁর বরকত সমূহ) যোগ করা যেতে পারে। আবু দাউদ,ইবনু খুজায়মা—সিফাত-পৃষ্ঠা-১৬৮

===========================
পরিশিষ্টঃ

# সালাতের সওয়াবঃ-

সালাতের সওয়াব নির্ধারিত হয় বান্দার খুশু(সময়নিষ্ঠা,একাগ্রতা,বিনয়) অনুযায়ী।যেমন, রাসূল(সঃ)বলেন,

“নিশ্চয় বান্দা সালাত আদায় করে, অথচ তার সে সালাতের সাওয়াব তার জন্য লেখা হয়, শুধু এক দশমাংশ, এক নবমাংশ, এক অষ্টমাংশ, এক সপ্তমাংশ, এক ষষ্ঠাংশ, এক পঞ্চমাংশ, এক চতুর্থাংশ, এক তৃতীয়াংশ ও অর্ধেক”। মুসল্লি সালাতের ততটুকু সাওয়াব পাবে, যতটুকু সে বুঝতে পারবে। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস(রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,“তোমার সালাত হতে তুমি ততটুকু পাবে, যতটুকু তুমি বুঝতে পারবে”।

# মহিলাদের সালাতঃ-

যদিও বাজার থেকে ক্রয় করা বইগুলোতে মহিলাদের সালাতের নিয়ম আলাদা করে দেখানো হয়েছে, কিন্তু কোন সহীহ হাদীসে এটা নাই। “ হযরত উম্মে আবু দারদা(রাঃ) তাশাহহুদে বসেছিলেন পুরুষদের মতো করে”। বুখারী-১ম খন্ড । রাসুলুল্লাহ(সঃ) নারী-পুরুষ সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমরা সেভাবে সালাত আদায় কর, যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছ”। বুখারী,মিশাকাত-৬৮৩-‘দেরীতে আযান’ অনুচ্ছেদ-৬ । পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য নাই। সালাতে নারীরা পুরুষের অনুগামী। মিরআত-৩/৫৯, নায়ল ৩/১৯ , ফিকহুস সুন্নাহ- ১/১০৯ ।

মহিলাদের জামায়াতে, মহিলাগন নীচু স্বরে আযান/ইকামত দিবেন ও মহিলা প্রথম কাতারের মধ্যস্থলে সমান্তরাল, ভাবে দাড়ায়ে ইমামতি করবেন।ভূপালী,আর-আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ(সানা ইয়ামন ১৪১১/১৯৯১)-১/৩২২ পৃঃ পুরুষ/মহিলাদের মিলিত জামায়াতে ইমামতি করবেন পুরুষ ইমাম। আর-রওযাতুন নাদিয়াহ-১/৩১২

# মাযহাবঃ-

সারা বিশ্বে ৪ মাযহাবের প্রচলন বেশী। পাক-ভারতীয় উপমহাদেশে হানাফী মাযহাবের প্রচলন বেশী।মাযহাবীদের বিশ্বাস ৪ মাযহাবের মধ্যে কোন এটকা মাযহাব মানা ফরয। তাদের সাথে যেকোন ধর্মীয় আলোচনা হলেই তারা মাযহাবের দোহাই দেন।বলেন এটা আমাদের মাযহাবে নাই।আল্লাহ ও রাসুল(সঃ) এবং উনাদের কুরআন,হাদীস মানা ফরয না মাযহাব মানা ফরয,এই জ্ঞ্যানও মুসলমানদের নাই।ফরয,সুন্নাত,নফল যে কোন বিধান রাসুলের(সঃ) এর মাধ্যমে হয়েছে। আবু হানীফা(রহঃ) ৮০ হিজরী, ইমাম মালেক(রহ) ৯৩/৯৪ হিজরী, ইমাম শাফেয়ী(রহঃ) ১৫০ হিজরী এবং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল(রহঃ) ১৬৪ হিজরীতে জন্মগ্রহন করেন। ইমামদের জন্মের বহু আগেই রাসুল(সঃ) মৃত্যুবরন করেন। তাহলে কিভাবে কিছু মানুষ “মাযহাব মানা ফরয/মানতেই হবে/আমাদের মাযহাবে নাই” এই ধারনা করছেন। চার মাযহবের কোনটাকে রাসুল(সঃ) ফরয করেছেন? সাহাবীরা কি মাযহাবের চিন্তা করতো ? মাযহাব ছাড়াই তো ১০ জন সাহাবী জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন।মাযহাব মানার এই চিন্তা হচ্ছে বিদয়াৎ। সম্মানিত ইমামগনের মতামত পড়া যেতে পারে এবং যেটা কুরআন/হাদীসের সাথে মিলে, সেটা নেয়া যেতেই পারে। আসুন জানি মহান ইমামগন কি বলেনঃ-

ইমাম আবু হানিফা

ক) ‘সহীহ হাদীস প্রমানিত হলে, সেটা আমার মাযহাব’। শায়খ সালেহ আল-ফালানী,ঈকায়ুল হিমান পৃষ্ঠা-৬২

খ) ‘ততক্ষন পর্যন্ত কারো জন্য আমাদের কথা গ্রহন করা বৈধ হবে না,যতক্ষন না জানা যাবে যে, আমরা কোথায় থেকে তা গ্রহন করেছি’।ইবনে আব্দুল বার-পৃষ্ঠা-১৪৫, ইবনুল কাইয়ুম-এলামুল মুআক্কেঈন পৃষ্ঠা-৩০৯,আশশারানী-আল মাযীন-১ম খন্ড-পৃষ্ঠা-৫৫

গ) ‘যে ব্যাক্তি আমার দলিল জানলো না, তার জন্য আমার ফতওয়া গ্রহন করা হারাম।

ঈকাযুল হিমা- শায়খ সালেহ আল ফালানী

ইমাম মালেক(রহ)

গ) ‘আমি একজন মানুষ ভুল করি,আবার ঠিক করি। সুতরাং তোমরা আমার রায়ে যাচাই কর।যা কুরআন, সুন্নাহর অনুকুলে তা গ্রহন কর এবং যা বিপরীত তা বর্জন কর”’। ইবনে আব্দুল বার-জামে ২য় খন্ড- পৃষ্ঠা ৩২-, ইবনে হাজম-উসুলুল আহকাম- ৬ খন্ড- ১৪৯ পৃষ্ঠা, সালেহ আল ফালানী-পৃষ্ঠা-৭২।

ইমাম শাফেয়ী(রহঃ)

ঙ) ‘আমি যা বলেছি, তা যদি রাসুল(সঃ)-এর যে হাদীস মুহাদ্দেসীনদের নিকট সহীহ বলে প্রমানিত, তার বিপরীত হয়, তাহলে আমি তা থেকে, জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পরে প্রত্যাবর্তনকারী’।

আবু নাঈম-আল-হিল ইয়াহ—৯ম খন্ড-১০৭ পৃষ্ঠা, ইবনুল কাইয়ুম- ইলামুল মুআক্কিন-২য় খন্ড-৩৬৩ পৃষ্ঠা, আল ফালানী- ১০৪ পৃষ্ঠা।

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল(রহ

চ) ‘আমার তাকলীদ(অন্ধ-অনুকরন) কর না, ইমাম মালেক,শাফেয়ী,আওযায়ী এবং সাওরীর অন্ধ-অনুকরন কর না। দ্বীনের বিধান সেখান থেকে কর, যেখান থেকে তারা গ্রহন করেছেন। (আল ফালানী- ১১৪ পৃষ্ঠা, ইবনুল কাইয়ুম- আল ইলাম- ২য় খন্ড-৩০২ পৃষ্ঠা।

৫টি মন্তব্য: