সর্বশেষ আপডেট

রমজান মাসের ফজিলত সমূহ


রমজান মাস যে মাসে অবতীর্ণ হয়েছে
আল-কুরআন, যা মানবজাতির জন্য
হেদায়াত এবং হেদায়াতের সুষ্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী বিধান। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে এই মাসটি পাবে, সে রোজা রাখবে। আর যে অসুস্থ অথবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্যদিনে গননা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না, যাতে তোমরা গননা পূরণ করো এবং তোমাদের হেদায়াত দান করার দরুন আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার
করো।
ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম ফরজ ইবাদত হলো সিয়াম বা রোজা পালন করা। মহান আল্লাহ রমজান মাসে সিয়াম পালনকে আমাদের উপর অত্যাবশকীয় করে দিয়েছেন এই জন্য যে এই মাসে অবতীর্ণ হয়েছে পবিত্র আল-কুরআন যা বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়াত এবং নিদর্শন ও সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী বিধান গ্রন্থ।
নিজ কু-প্রবৃত্তিকে দমন ও আত্মশুদ্ধির
সর্বোত্তম মাস হলো রমজান। প্রথমত সিয়াম সাধনায় আল্লাহর নির্দেশ পালন করা হয়।
দ্বিতীয়, রোজা দ্বারা সংযমী হওয়া যায়।
তৃতীয়, রোজা দ্বারা অতীতের গুনাহসমূহ
থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। পারতপক্ষে
আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের সর্বোত্তম
পন্থা হলো সিয়াম সাধনা। মহান আল্লাহ
তা’আলা বলেন-
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ
ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻠِﻜُﻢْ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ
হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল
তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা
তাকওয়া অবলম্বন কর।
উক্ত আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, সিয়াম
সাধনার দ্বারা তাকওয়া বা আল্লাহভীতি
অর্জিত হয়। এই পবিত্র মাসকে পূর্ণভাবে আল্লাহর রহমত, বরকত ও নাজাত প্রাপ্তির জন্য আমাদের কিছু করণীয় আছে এবং সেই সাথে কিছু বর্জনীয় কার্যাবলী রয়েছে যা পরিত্যাগ করার মাধ্যমে আমরা রমজান মাসকে কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী পালন করতে পারব। রমজান আমাদেরকে সংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয়। শুধুমাত্র পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে দিনের বেলায় বিরত থাকাই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য নয়। প্রকৃতপক্ষে রমজান মাসে সার্বক্ষণিক নিজের কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে প্রকৃত তাকওয়া অর্জন করা সম্ভব। আমাদের ভুলে গেলে হবে না যে, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়টুকু
রোজার অন্তুর্ভূক্ত নয়; বরং দিন ও রাত্রি
উভয় সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে সিয়াম সাধনার প্রকৃত আত্মতৃপ্তি লাভ করা সম্ভব। সিয়াম সাধানার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি হালাল খাদ্য ও পানীয়কে আল্লাহর নির্দেশের কারণে বর্জন করে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করে। সেই সাথে তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, দান-সদকাহ, কুরআন তিলাওয়াতসহ অন্যান্য ইবাদত করার মাধ্যমে তার আত্মার পরিশুদ্ধতা অর্জিত হয়।
পবিত্র রমজান মাসে হাদিসে উল্লেখিত কতিপয় আমল দ্বারা আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি :
১. আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রহমত লাভের
উদ্দেশ্যে সিয়াম সাধনা করা:
ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿـ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺇﺫ ﺩﺧﻞ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻓﺘﺤﺖ ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﻭﻓﻲ
ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻓﺘﺤﺖ ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﻋﻠﻘﺖ ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺟﻬﻨﻢ
ﻭﺳﻠﺴﻠﺖ ﺍﻟﺸﻴﺎﻃﻴﻦ ﻭﻓﻰ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻓﺘﺤﺖ ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ .
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল
সা. বলেছেন, যখন রমজান মাস আসে
আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। অপর
বর্ণনায় রয়েছে বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে
দেয়া হয়, দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়
এবং শয়তানকে শৃংখলিত করা হয়। অপর
বর্ণনায় আছে, রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া
হয়।
রমজান মাসে যেহেতু বেহেশতের ও রহমতের
দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় সেহেতু রোজা
রেখে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর
রহমতের আশা করব।
২. মুখ ও জিহ্বাকে সংযত রাখা
পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত
থাকার পাশাপাশি নিজের মুখ ও জিহ্বাকে
সংযত রাখতে হবে। মিথ্যা, অশ্লীল
কথাবাতা, গালিগালাজ, গীবত, পরনিন্দা,
অভিশাপ দেয়া ও চোগলখোরীসহ অন্যান্য
অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
হাদিসে এসেছে-
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ – ﺭﺿـ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﺪﻉ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﺰﻭﺭ ﻭﺍﻟﻌﻤﻞ ﺑﻪ ﻓﻠﻴﺲ
ﺍﻟﻠﻪ ﺣﺎﺟﺔ ﻓﻰ ﺃﻥ ﻳﺪﻉ ﻃﻌﺎﻣﻪ ﻭﺷﺮﺍﺑﻪ .
অবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী করীম সা.
বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মিথ্যা
কর্ম পরিত্যাগ করেনি, তার পানাহার ছেড়ে
দেয়াতে আল্লাহর কোন কাজ নেয়।
৩. নিয়মিত তারাবীহর নামাজ আদায় করা
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তারাবীহ
পড়তে হবে। কেননা, যে ব্যক্তি রমজানে
তারাবীহ নামাজ পড়বে তার অতীতের সগীরা
গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। হাদিসে
এসেছে-
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ – ﺭﺿـ – ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ – ﺻﻠﻰ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺮﻏﺐ ﻓﻰ ﻗﻴﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﺍﻥ
ﻳﺄﻣﺮﻫﻢ ﻓﻴﻪ ﺑﻌﺰﻳﻤﺔ ﻓﻴﻘﻮﻝ ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺇﻳﻤﺎﻧﺎ
ﻭﺍﺣﺘﺴﺎﺑﺎ ﻏﻔﺮﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻡ ﺫﻧﺒﻪ .
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,
আল্লাহর রাসূল সা. রমজান মাসের নামাজ
কাযেম করার জন্য উৎসাহ দান করতেন; কিন্তু
তিনি এ বিষয়ে খুব তাকীদ করতেন না। বরং
এরূপ বলতেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে
সাওয়াবের নিয়তে রমজান মাসে নামায
কায়েম করবে তার পূর্ববর্তী (সগীরা)
গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে।
৪. কুরআন তিলাওয়াত করা :
নফল ইবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হলো
কুরআন তিলাওয়াত করা। যেমন হযরত নুমান
বিন বাশির রা. হতে বর্ণিত নবী করীম সা.
ইরশাদ করেন –
ﺃﻓﻀﻞ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺃﻣﺘﻰ ﺗﻼﻭﺓ ﺍﻟﻘﺮﺃﻥ
আমার উম্মতের সবচেয়ে উত্তম ইবাদত কুরআন
তিলাওয়াত করা।
অন্য হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি রমজান
মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে
একটি নফল কাজ করবে সে ঐ ব্যক্তির সমান
হলো যে, অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল।
সুতরাং রমজান মাসে কুরআন তিলাওয়াতের
মাধ্যমে আমরা অধিকতর সওয়াবের অধিকারী
হবো।
৫. বেশি করে দান-সদকাহ করা
মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন-
ﻣَﺜَﻞُ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻨْﻔِﻘُﻮﻥَ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻬُﻢْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻛَﻤَﺜَﻞِ ﺣَﺒَّﺔٍ
ﺃَﻧْﺒَﺘَﺖْ ﺳَﺒْﻊَ ﺳَﻨَﺎﺑِﻞَ ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺳُﻨْﺒُﻠَﺔٍ ﻣِﺌَﺔُ ﺣَﺒَّﺔٍ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ
ﻳُﻀَﺎﻋِﻒُ ﻟِﻤَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺍﺳِﻊٌ ﻋَﻠِﻴﻢٌ .
যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয়
করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মতো, যা
থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে
একশ করে দানা থাকে। আর আল্লাহ যার জন্য
ইচ্ছা করেন (সওয়াবে) কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে
দেন। আল্লাহ অতি প্রাচুর্যময় (এবং) সর্বজ্ঞ।
৬. নিজে ইফতার করার পাশাপাশি
রোজাদারদের ইফতার করানো
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
ﻋﻦ ﺯﻳﺪ ﺑﻦ ﺧﺎﻟﺪ ﺍﻟﺠﻬﻨﻲ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﻦ ﻓﻄﺮ ﺻﺎﺋﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﻣﺜﻞ ﺃﺟﺮﻩ ﻏﻴﺮ ﺃﻧﻪ ﻻ
ﻳﻨﻘﺺ ﻣﻦ ﺃﺟﺮ ﺍﻟﺼﺎﺋﻢ ﺷﻴﺊ .
হযরত যায়েদ বিন খালেদ জুহানী রা. হতে
বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন
রোজাদারকে ইফতার করালো তাকে
রোজাদারের অনুরূপ সওয়াব দান করা হবে।
কিন্তু রোজাদারের সওয়াবের কোন কমতি
হবে না।
৭. মিসওয়াক করা : হাদিস শরীফে বর্ণিত
আছে,
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﺎﻣﺮ ﺑﻦ ﺭﺑﻴﻌﺔ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ ﺭﺃﻳﺖ
ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺎ ﻻ ﺃﺣﺼﻲ ﻳﺘﺴﻮﻙ ﻭﻫﻮ
ﺻﺎﺋﻢ.
আব্দুল্লাহ বিন রবিআ রা. তাঁর পিতা হতে
বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি নবী করীম
সা. কে রোজা অবস্থায় অসংখ্যবার
মিসওয়াক করতে দেখেছি।
৮. শীঘ্রই ইফতারী করা
হাদিস শরীফে এসেছে –
ﻋﻦ ﺳﻬﻞ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ-
ﻻ ﻳﺰﺍﻝ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﺨﻴﺮ ﻣﺎ ﻋﺠﻠﻮ ﺍﻟﻔﻄﺮ .
হযরত সাহল ইবনে সা’দ রা. বলেন, আল্লাহ
রাসূল সা. বলেছেন, মানুষ কল্যানের সাথে
থাকবে যতকাল তারা শীঘ্রই ইফতার করবে।
অন্য হাদিসে আছে, হযরত আবু হুরায়রা রা.
হতে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন, আল্লাহ
তা’আলা বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে
আমার কাছে তারাই বেশি প্রিয় যারা
শীঘ্রই ইফতারী করে।
৯. ইফতারের পূর্বে ও ইফতারের সময় দোয়া
করা
হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূল সা. যখন ইফতার করতেন নিম্নের
দোয়াটি পড়তেন :
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻟﻚ ﺻﻤﺖ ﻭﻋﻠﻰ ﺭﺯﻗﻚ ﺃﻓﻄﺮﺕ ﺗﻘﺒﻞ ﻣﻨﻲ ﺇﻧﻚ
ﺃﻧﺖ ﺍﻟﺴﻤﻴﻊ ﺍﻟﻌﻠﻴﻢ .
হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য রোজা
রেখেছি এবং তোমার রিজিক দিয়ে ইফতার
করছি। তুমি আমার এই রোজাকে কবুল কর।
নিশ্চয় তুমি সর্বজ্ঞ, সর্বশ্রোতা।
১০. বেশি করে ইসতেগফার ও দোয়া করা
এই রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত্রি
হলো লাইলাতুল কদর। হাদিস মোতাবেক
রমজানের শেষের দশদিন বেজোড় রাতে
লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করার কথা বলা
হয়েছে। এই জন্য যে মহান আল্লাহ দেখতে
চান লাইলাতুল কদরের বরকত ও ফজিলত
লাভের উদ্দেশ্যে তার কোন বান্দা বেশি
ইবাদত করে।
রাসূল সা. এই শেষ দশকে আল্লাহর কাছে
ক্ষমা প্রার্থনা করতেন তা নিম্নোক্ত হাদিস
দ্বারা প্রমাণিত। হযরত আয়েশা রা. থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল সা. কে
লাইলাতুল কদরের কথা জিজ্ঞাসা করলাম,
আজ কি দোয়া পাঠ করব? তিনি বললেন
নিম্নের দোয়াটি পাঠ করবে:
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺇﻧﻚ ﻋﻔﻮ ﺗﺤﺐ ﺍﻟﻌﻔﻮ ﻓﺎﻋـﻒ ﻋﻨﻰ .
হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল। তুমি
ক্ষমাশীলতাকে ভালবাস। অতএব আমাকে
ক্ষমা করো।
১১. খেজুর অথবা পানি দিয়ে ইফতার করা
হযরত সালমান আমের রা. বলেন, রাসূল সা.
বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে
সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে, কেননা
এতে বরকত রয়েছে। যদি খেজুর না পায়, তবে
যেন পানি দ্বারা ইফতার করে, এটি
পবিত্রকারী।
১২. সেহরী খেয়ে রোজা রাখা
সেহেরী খাওয়া সুন্নত। সেহেরী খেয়ে
রোজা রাখার মধ্যে বরকত নিহিত রয়েছে।
হাদিস শরীফে এসেছে-
ﻋﻦ ﺃﻧﺲ – ﺭﺿـ – ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ- ﺗﺴﺤﺮﻭﺍ ﻓﺈﻥ ﻓﻰ ﺍﻟﺴﺤﻮﺭ ﺑﺮﻛﺔ .
আনাস বিন মালেক রা. হতে বর্ণিত, রাসূল
সা. বলেছেন- তোমরা সেহেরী খাবে।
কেননা, সেহরীতে বরকত রয়েছে।
১৩. মসজিদে এতেকাফ করা
রমজানের শেষের দশদিনে এতেকাফ করা
সুন্নত। পুরুষরা মসজিদে এবং স্ত্রীলোকেরা
আপন ঘরে একটি স্থান ঘিরে নিয়ে তথায়
এতেকাফ করবে। হাদিসে এসেছে-
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ- ﺭﺿـ – ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ-
ﻛﺎﻥ ﻳﻌﺘﻜﻒ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﺍﻷﻭﺍﺧﺮ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺣﺘﻰ ﺗﻮﻓﺎﻩ ﺍﻟﻠﻪ،
ﺛﻢ ﺍﻋﺘﻜﻒ ﺃﺯﻭﺍﺟﻪ .
হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত যে, নবী করীম
সা. রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করতেন,
যাবৎ না আল্লাহ তাকে উঠিয়ে নিয়েছেন
এবং তাঁর পর তাঁর স্ত্রীগণও এতেকাফ
করেছেন।
১৪. বেশি বেশি করে নফল নামাজ আদায়
করা
হাদিস মোতাবেক রমজান মাসে একটি নফল
ইবাদত করলে একটি ফরজ ইবাদতের সমান
মর্যাদা পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে, হযরত
আলী রা. বলেন, আমাকে হযরত আবু বকর রা.
বলেছেন আর তিনি সত্য বলেছেন তিনি
বলেছেন আমি রাসূল সা.কে বলতে শুনেছি
যে, কোন ব্যক্তি গুনাহ করবে অতঃপর ওঠে
আবশ্যকীয় পবিত্রতা লাভ করবে এবং নফল
নামাজ পড়বে; তৎপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা
প্রার্থনা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তার গুনাহ
ক্ষমা করে দিবেন।
১৫. বেশি করে আল্লাহর জিকির ও তাসবীহ-
তাহলীল করা
রমজান মাসে বেশি করে তাসবীহ পাঠ করে
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্ঠা করতে
হবে। মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন ,
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺇِﺫَﺍ ﻓَﻌَﻠُﻮﺍ ﻓَﺎﺣِﺸَﺔً ﺃَﻭْ ﻇَﻠَﻤُﻮﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻬُﻢْ ﺫَﻛَﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ
ﻓَﺎﺳْﺘَﻐْﻔَﺮُﻭﺍ ﻟِﺬُﻧُﻮﺑِﻬِﻢْ ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻻ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻟَﻢْ
ﻳُﺼِﺮُّﻭﺍ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﻓَﻌَﻠُﻮﺍ ﻭَﻫُﻢْ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ .
আর যারা কোন অশ্ল¬ীল কাজ করে অথবা
নিজেদের প্রতি যুলুম করে আল্ল¬াহকে স্মরণ
করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা
প্রার্থনা করে। আর আল্ল¬াহ ছাড়া কে গুনাহ
ক্ষমা করবে ? আর তারা যা করেছে, জেনে
শুনে তা তারা বার বার করে না।
১৬. রমজান মাসে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ
করা
রমজান মাসের শেষের দশদিনের বেজোড়
রাত্রিতে লাইলাতুল কদরের জন্য বেশি করে
আল্লাহর ইবাদত করতে হবে এবং সারা
বিশ্ববাসীর শান্তি, ক্ষমা ও স্থিতিশীলতার
জন্য দোয়া করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻣِﻦْ ﺃَﻟْﻒِ ﺷَﻬْﺮٍ
লাইলাতুল কদর এক হাজার মাসের চেয়ে
উত্তম।
১৭. রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করা :
রমজান মাসে এমন কিছু করা যাবে না যা
শরীয়তপরিপন্থী। যেমন রোজাদারহীন
ব্যক্তি রোজাদারদের সামনে পানাহার
করা। সেই সাথে অশ্লীল ও অনৈতিক
কার্যাবলী থেকে বিরত থাকতে হবে। মহান
আল্লাহ বলেন-
ﻭَﻻ ﺗَﻘْﺮَﺑُﻮﺍ ﺍﻟْﻔَﻮَﺍﺣِﺶَ ﻣَﺎ ﻇَﻬَﺮَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻭَﻣَﺎ ﺑَﻄَﻦَ .
আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে না তা
থেকে যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে।

পরিশেষে বলতে চাই আমরা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত ও সৎকর্মের মাধ্যমে এই রমজানের ফজিলত পূর্ণভাবে অর্জন করতে পারি। মহান আল্লাহ এই রমজান মাসে আমাদের উপর রহমত, রবকত ও মাগফেরাত প্রদান করুন এবং আমাদের জাহান্নাম থেকে নাজাত প্রদান করুন।
আমিন।

কোন মন্তব্য নেই